Skip to main content

বহুকাল আগে, কবি আক্ষেপে গেয়ে উঠেছিলেন –

"এসেছি কি হেথা যশের কাঙালি কথা গেঁথে গেঁথে নিতে করতালি - মিছে কথা কয়ে, মিছে যশ লয়ে, মিছে কাজে নিশিযাপনা"

সেই সুর, অন্য রাগে বাঁধা পড়ল শুনলাম Yashodhara Ray Chaudhuri র একটা লেখায় আজ। তিনি তার অনেক পুরোনো একটা কবিতায় লিখেছিলেন –


'বিশ্বাস, জরুরি, আর বিশ্বাস, সচ্চাই, ধুলোহীন...

পুণ্যসাবানের মতো নিখাদ ও বিশুদ্ধ সব বিশ্বাস, প্রতীতি

নষ্ট হয়ে যায়, মনে নষ্ট হয়ে যায় এই অনর্থকর্থ গা-ঘেষাঘেষির মধ্যে। দিনে।


রাত হলে ফের ভাবি ভয় নাই। চোখ খুলে ঠাণ্ডা করি

জলের গেলাসে রেখে দিয়ে

ঘুমোই, ও পুষ্ট হয়ে ওঠে ফের রসবন্ত ফল

মনে হয় ফের সব ঠিক হয়ে যাবে' (ভয়)


তারও আগে লিখছেন, 'কারণ সবকিছুভর্তি জটিলতা আমি আর পছন্দ করি না' (শান্তি-বিষয়ক)

আজকের এই পোস্টটা সেই একই সুরে। স্বচ্ছ বিদ্যুতের ফলার মত চমকে উঠে আশেপাশের দ্বিচারিতার নিশ্চিত নিশিযাপনকে যেন বে-আব্রু করে দিল হঠাৎ। দিলাম যশোদির ওয়াল থেকে –

"ব্যাপারটা এখন বেশ অভ্যেস হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম অসুবিধে হত খুব। এই যেমন, নব্বই দশক। সদ্য সদ্য উঠেছি পণ্যসং হিতার রাগি রাগি কবিতা লিখে... ওহো শ্যাম্পুদেওয়া চুল, ওহো সূক্ষ্ম সাবানের কাচা / রঙিন কাপড় তুমি উড়ে উড়ে ঠ্যাং দেখিও না... অথবা 'নিরুদবিগ্ন ক্রেতাহীন হয়ে যাবে গোটা একটা দেহের বাজার' অথবা " বিশুদ্ধ বন্ধন নামে একটি নতুন তেল বাজারে এসেছে" এইসব লিখেটিখে মনে একটা বিপ্লবী ভাব এসেছিল।

তখনই সেই সব ঘটনা। খেটে খাওয়া, দুর্বল, প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে উপন্যাস ও গল্প লেখা এক খ্যাতনামা লেখিকা হঠাৎ বলে ওঠেন, পার্ক স্ট্রিটের শাড়ির দোকানগুলো এক্সপ্লোর করেছ তো? রঙ্গোলির শাড়ি সবচেয়ে ভাল। অথবা কোন উঠতি বিপ্লবী বলে ফেলেন, পিৎসা হাটের হোম ডেলিভারির নাম্বার আমার ছেলের মুখস্থ। আহা ওই থিন ক্রাস্ট! একটা পেপারনি আর ট্রিপল চিজ নিয়ে দেখ।

বেশ অসুবিধা হত। তারপর ত যত বিপ্লবী যত আঁতেআঁ ল যত খেটেখাওয়া মানুষের প্রেমিক প্রবরের মিটিং প্লেসই হয়ে গেল "কাপে কফি দে" নামের চেইন স্টোর। যেখানে এক কাপ কফির দাম একশো থেকে দেড়শো টাকা।

এখন আর অসুবিধা হয়না, ৫০০ টাকা দিয়ে মান্টো-র টিকিট কেটে, পাঁচপাঁ হাজারি রিবক জুতো আর মাংগোর আট হাজার টাকার পোশাকের উইন্ডো শপিং করে, বড় বাকেটে চিজ পপকর্ণ আর আর বড় কোক খেয়ে, সিনেমাটার দারিদ্র্য, প্রচুর "স্ট্রাগল" , দেশভাগের যন্ত্রণা, মৃত্যু ও ধর্ষণের বারমাস্যা দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে ( অথবা চোখের জল ফেলে) আবার বেরিয়ে পিটার ক্যাটের চেলো কাবাবে মন দিতে পারি দিব্যি।" ~ Yashodhara Ray Chaudhuri