Skip to main content

        পাখিটা ডাকতেই ছেলেটা ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালো। এক হাতে একটা আধ খাওয়া পেয়ারা। ছুঁড়ে ফেলে দিল পুকুরের জলে। ধুপ্ করে আওয়াজ করে, একটা গোল চাকতি ঢেউ তুলে পেয়ারাটা ডুবে গেল। পুকুরের জলে ভাসা নারকেল গাছের ছায়াগুলো উড়ন্ত কাপড়ের মত দুলে উঠল। ছেলেটা ভালো করে খেয়াল করল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। দাঁতের ফাঁকে একটা বিচি অনেকক্ষণ ধরে আটকে, জিভ দিয়ে ঠেলে ঠেলে বার করার চেষ্টা করতে করতে বেরোলো অবশেষে। আঙুল দিয়ে বার করে হাতে তুলে নিয়ে দেখল, এই ছোট্টো বিচিতে অতবড় গাছ হবে? বিচিটায় লেগে থাকা লালা হাফ প্যান্টের সাথে ঘষে মুছে নিল। চোখের কাছে এনে ভালো করে দেখল, কি আছে এতে? তারপর বাগানের একটা কোনে পুঁতে, একটা লাঠি পুঁতে দিল পাশে। খেয়াল করতে হবে কি করে হয় গাছটা। 
        হঠাৎ সুধারানীর গলা পেয়ে হুড়মুড় করে দিল ঝাঁপ পুকুরে। স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যাবে। ঠাকুমাই তো দিয়ে আসে, মানে হাতে করে তার বইখাতা নিয়ে যায় আরকি। 
        সুধারানী এসে দেখল কালু সাঁতার কাটছে জলে। সুধারানী একটু মিথ্যা রাগের ভান করে বলল, উঠবি তাড়াতাড়ি। 
        সুধারানী বিধবা। তার স্বামীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। দেবতুল্য চরিত্র ছিল তার স্বামীর, গ্রামের সবাই বলে। সুধা নিজেও জানে। পূজো-আচ্চা, যজমানি করত তার স্বামী। সংস্কৃতও পড়াত, তবে পারিশ্রমিক নিত না। বলত, "বিদ্যা দানের বস্তু, বেচার বস্তু না।" সুধার সংসারে সচ্ছলতা না থাকলেও অভাব ছিল না। 
        সুধা সুন্দরী, বাংলার গ্রামে এত লম্বা মেয়ে বড় একটা দেখা যায় না। সুধা বুদ্ধিমতী। সেটা বোঝে তার সৎ ছেলে সুরেন্দ্রর বউ, শিবানী। সুধার নিজের পেটের দুই ছেলে নরেন্দ্র আর রমেন্দ্র। ঘাটভোগে (অধুনা বাংলাদেশের) তার শ্বশুরের চোদ্দো পুরুষের বাস।
        কালুর উপর একটা আশ্চর্যরকমের টান সুধার। কালুর গায়ের রঙ যেন তার স্বামীর গায়ের রঙ বসানো। সুধা কেন, সারা গ্রামের লোক বিশ্বাস করে মহেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য ফিরে এসেছে আবার নাতির রূপ ধরে। কালুর স্কুলের নাম স্বরাজ। তার দাদার নাম মনসিজ। এক বছরের ছোটো-বড়। মনসিজ শান্ত, মায়ের নেওটা। চঞ্চল এই স্বরাজ, মানে কালুটা। যখন তখন গোয়াল ঘরে ঢুকে গরু-মোষ ছেড়ে দেয়। কই মাছ এনে চালের টিনে পুরে রাখে। গাছ থেকে পড়ে হাত-পা ভাঙে। মোষের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ায় এ গ্রাম, সে গ্রাম। বর্ষাকালে নিজেই ডিঙি তৈরি করে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। আর তার সমস্ত দৌরাত্ম্যর খেসারত দিতে হয় সুধাকে, বিশেষ করে নরেন্দ্রর কাছে। সুরেন্দ্র সংসারে উদাসীন। কয়েকদিন যজমানি করে ছেড়ে দিয়ে কলকাতা চলে গেল। মাসে একদিন আসে কি আসে না। সংসারের খোঁজ-খবর রাখে না খুব একটা। সমস্ত ভার নরেন্দ্রর উপরেই। রমেন্দ্র অনেক ছোটো, পড়াশোনায় খুব ভালো। স্বরাজ আর মনসিজের ছোটোকাকার সাথে তাই খুব জমে। বিশেষ করে মনসিজের তো খুব ইচ্ছা সে ছোটোকাকার মত হোক পড়াশোনায়।
        কালুকে নিয়ে ঠাকুমা চলে স্কুলে। কালু আগে আগে চলে কখনও নাচতে নাচতে, কখনও ডিগবাজি খেতে খেতে, এই গাছে চড়ে, এই কুকুরের পিছনে ধাওয়া করে। পিছনে পিছনে ঠাকুমা বই নিয়ে। স্কুলে পৌঁছিয়ে ঠাকুমার গলা আর পা কিছুতেই চলতে চায় না চেঁচিয়ে আর দৌড়িয়ে। স্কুলে খানিক বসে, জিরিয়ে বাড়ি ফেরে। ছেলেটার দৌরাত্ম্য যত বাড়ে সুধার স্নেহ ওঠে তত উপচিয়ে। দুপুরে চারটি খেয়ে, একটু শুয়ে বিকালে পুকুরে যায়। কত রকম কাজ থাকে। কাচাকাচি, শাক তোলা, মাছ উঠেছে কিনা দেখা। কালুর তখন স্কুল থেকে ফেরার সময়। কালু কোনোদিন স্কুল থেকে সরাসরি বাড়ি যায় না। ঠাকুমাকে খোঁজে। আগে পুকুরে, পুকুরে না পেলে মাঠে, মাঠে না পেলে ফুলপিসি কি ননীদিদার বাড়ি। যেখানে পায় সেখানেই সে ঠাকুমার সাথে ভিড়ে যায়। সারা গ্রাম চষে যখন বাড়িতে ঢোকে তখন হয়ত সন্ধ্যে। নরেন্দ্র যেদিন কাজ থেকে আগে বাড়িতে ফিরে আসে শিবানী চোখের ইশারায় জানিয়ে দেয় - নরেন্দ্র বাড়িতে। কালুর মুখ শুকিয়ে যায়, সুধার উপর ভার পড়ে নরেন্দ্রর রাগ সামলানোর। "তুমি আর আশকারা দিয়ে ওর মাথাটা খেয়ো না মা... দেখছ তো দাদার অবস্থা! এই সংসার আমার একার পক্ষে চালানো যে কি কঠিন তা তো তুমি জানো, এরা যদি না দাঁড়ায় আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াই বলতে পারো?”
        নরেন্দ্র'র গলা বুজে আসে। কালু ধীরে ধীরে ঠাকুমার কানে কানে বলে, "ও ঠাম্মা, বই তো আমার পুকুরের ধারে থুয়ে আইসি"...
        ঠাকুমা-নাতি চলে হ্যারিকেন হাতে বই খুঁজতে। কালু জোনাকি দেখে, আকাশ ভরা তারা দেখে, রাতের অন্ধকারে পুকুরের মধ্যে কেমন একটা গা ছমছমে ভাব থাকে, বিশেষ করে ওই ওপারের নারকেল গাছগুলোর সারিতে, হাওয়ায় দুলে উঠলেই মনে হয় বুঝি কোনো ব্রহ্মদৈত্য নাড়া দিয়ে গেল, সে ঠাকুমার আঁচল চেপে ধরে।

        দেশ ভাগ হল। স্বরাজ আর মনসিজের পড়াশোনার ভার পড়ল সম্পূর্ণ নরেন্দ্রর উপর। কারণ সুরেন্দ্র দেশ ছেড়ে ভারতে গেল না। ভিটে কামড়ে পড়ে রইল। সুধাও গেল না। লোকে বলল, "এ তোমার কেমন কথা! ও তো সতীনের ছেলে। তোমার ওর কাছে কেন থাকা? যাও ভারতে নিজের ছেলেদের কাছে, পাকিস্তানে থেকে নিজের ইজ্জত খোয়াতে কতক্ষণ, কত রকম বিপদ!"
        সুধা তবু গেল না। এটা অধর্ম। আজ না হয় রাতারাতি পাকিস্তান হয়ে গেল, আসলে তো এই তার ভিটে, সুরেন্দ্র তো ঠিকই করেছে। আর চারদিকে যা অবস্থা, এমন গোঁয়ার ছেলে রেখে যাওয়াও তো বিপদ, সে চলে গেলেই হবে?! সুধা জোর করে শিবানীকে পাঠিয়ে দিল নরেন্দ্র আর রমেন্দ্রর সাথে। স্বরাজ আর মনসিজও গেল।

        স্বরাজ বলল, সায়েন্স পড়বে। নরেন্দ্র কেঁদে ফেলল। স্বরাজের মাথা ভালো, কিন্তু সায়েন্স পড়ানোর মত খরচ চালায় কি করে? সে হাওড়ায় এসে কোনো রকমে একটা মাথা গোঁজার জায়গা করেছে। তার মধ্যে এতগুলো মানুষের পেট চালানো, দুই ভাইপো আর নিজের ছোটোভাইয়ের পড়াশোনা চালানো। হয় কি করে? শিবানীর দাদা খুব উঁচু পোস্টে চাকরি পেয়েছে। দু'বছরের মধ্যে শিবানী আর তার দুই ছেলেকে নিতে এসেছিল। শিবানী যায়নি। বলেছিল, "মানুষ যদি হয় দাদা তো এরই মধ্যে এখান থেকেই হবে, মানুষ তো বস্তির ছেলেমেয়েরাও হয়, তুমি ফিরে যাও, যা থাকে আমার কপালে তাই হবে।"
        স্বরাজ সায়েন্স নিল। নরেন্দ্র তার হাত ধরে বলল, "আমি তো তোকে মাষ্টার রেখে পড়াতে পারব না, তুই পারবি তো?" স্বরাজ তার কাকার অবস্থা বোঝে, বলল, "পারব।" নরেন্দ্র'র জুটমিলে দুপুরে কেক দেয় আর চা। নরেন্দ্র কেকটা খায় না, ভাইপো দুটোকে তো ভালো কিছু খাওয়াতে পারে না, তাই লুকিয়ে পকেটে ভরে নিয়ে আসে, ভাইপো দুটো স্কুল থেকে এসে খাবে।
        দু'বছর পর সুধা এলো, সুরেন্দ্রও ফিরল। সব ভিটেমাটি ওরা কেড়ে নিয়েছে। সুরেন্দ্র যেন সব হারালো। সংসারে আরো উদাসীন, সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়, খেয়াল হলে যজমানি করে। শিবানী কাঁদে। নরেন্দ্র বলে, "তুমি দাদার উপর কোনো আশা রেখো না বৌদি, আমি যতদিন খেতে পাই তোমার আর তোমার ছেলেদের মুখের দু'মুঠো অন্ন জোগাড় আমি করে যেতেই পারব।"
        দিন গেল। নরেন্দ্র বিয়ে করল। স্বরাজ আর মনসিজ দু'জনেই সরকারি চাকরি পেল। ছোটোভাইটাও ভালো চাকরি পেল। সবার আলাদা আলাদা সংসার নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
        এতো টালমাটালেও ঠাকুমা-নাতির সম্পর্কের টান কমল না। এতদিন যা ছিল দৌরাত্ম্য, এখন তা এক অলৌকিক বন্ধুত্ব। সুধা রমেন্দ্রের কাছে থাকে। তার উপার্জন বেশি, তাই সে দাদার উপর আর ভার দিতে চায় না। নরেন্দ্রও পরিস্থিতির দিকে চেয়ে মেনে নিল। তার নিজের এক ছেলে, এক মেয়ে তখন। তা ছাড়া নিজের ভাইয়ের কাছেই তো থাকা, থাকুক না মা, ভালোই থাকবে।
        কিন্তু মানুষের ভালো থাকার হিসাব আর কবে দুয়ে দুয়ে চার হল? রমেন্দ্র বিয়ে করল এক ধনী পরিবারের মেয়েকে। সে পরিবারে এসে সুধাকে অনাবশ্যক বাড়তি বলেই বোধ করল। মালবিকা বড় হয়েছে সুখে, বিলাসে। বাবা, মা আর সে। অভাবের কথা নভেলে পড়েছে, বায়োস্কোপে দেখেছে, কিন্তু সেই প্রজাতির মানুষের সাথে নিজের প্রজাতির মিল কোনোভাবে থাকতে পারে তা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। তাই সুধার সবটাতেই তার আপত্তি, আরো স্পষ্ট করে বললে, ঘেন্না। সুধা বুঝল, কিন্তু বুঝতে দিল না। সুধার চোখের ভাষা সংসারে তিনজন পড়তে পারত। এক শিবানী, দুই কমলা, মানে তাদের গরু আর স্বরাজ। সংসারে শিবানী আর কমলা দু'জনেই অবলা, তাদের বেদনার্ত বোঝার উপরে শুধু নিঃশব্দ অশ্রুপাতের বোঝাই বাড়ত। স্বরাজের তো তা নয়।
        একবার পুকুর পাড় থেকে বাসন মেজে আসার পথে সুধার পা ভাঙল। স্বরাজ দেখতে এলো ঠাকুমাকে। যতটা দেখল, বুঝল তার চাইতে অনেকগুণ বেশি। ভিতরটা ফালা ফালা হয়ে যেতে লাগল যেন। চোখের কোল ঘেষে জল এসে পড়ছে। সুধা খেয়াল করল। তার পাশে বসে রমেন্দ্রর ছেলে বাপি, আট-ন'বছর হবে। তাকে উদ্দেশ্য করে বলল সুধা, "জানিস বাপি, তোদের কালুদাদা যখন খুব ছোটো, একবার শিঙ্গি মাছ ধরতি গিয়ে গেল কাঁটা ফুটে হাতে, সে তো মাটিতে পড়ে ছটফট করতি শুরু করেছে, আমি আর কি করি, আমি ডাক ছেড়ে কান্না জুড়ে দিসি, ওরে কে কোথায় আছিস পোলাডা মরে গেল রে... তখন তোর কালুকাকা কান্না থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি বলল জানিস? বলল, ওরে ঠাম্মা তুমি কানতিসো কেন? আমি তো সহ্য করতে পারতাসি..."
        সুধার হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে ময়লা সাদা থানে। স্বরাজ স্থির দৃষ্টিতে সুধার দিকে চেয়ে, 'তুমি কানতিসো কেন... আমি তো সহ্য করতি পারতাসি...' বুঝল এ কথার মানে কি।
        বাপি ক্রমে বিপথে যেতে লাগল। মালবিকা চায় না তার ছেলে তার বাবার মত অভাবের মধ্যে বড় হোক, “কি যে সারাদিন আপনাদের নেই নেই মা বুঝি না, যা হয়ে গেছে তাই নিয়ে তো প্যাঁচাল পাড়ার কি আছে বুঝি না বাপু..."
        সুধার চোখের সামনে ক্রমে বাপি নষ্ট হতে শুরু করল। সুধা চুপ থাকতে চাইলেও চুপ থাকতে পারত না। বলতে গেলেই অশান্তি বাধত। রমেন্দ্রর মধ্যে কোথাও একটা হীনমন্যতা কাজ করত, সে মালবিকার মেজাজের জন্যেই হোক, কি মালবিকার বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থানের জন্যেই হোক। সে চুপ থাকত, নয় এড়িয়ে যেত। দুর্বলের ক্ষোভ গড়ায় ঢালু আর নরম জমির দিকেই। সুধার চাইতে অমন নরম জমি আর কোথায়?
        সুধার মনে হত সে যেন অনন্তকাল পুকুরপাড়ে বসে বাসন মেজে যাচ্ছে, সন্ধ্যে হব হব, পশ্চিম আকাশে আর সূর্য দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু তার যেন বাসন আর শেষ হচ্ছে না। তাকে যে ফিরতে হবে এবার!
        সুধার শেষ সময়গুলো কাটল নরেন্দ্রর কাছেই। নরেন্দ্রর জুটমিল বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েক বছর হল। ছেলেটা সদ্য স্কুল পাশ করেছে, মেয়েটাও পড়ছে। কিন্তু সে কিচ্ছু নেবে না তার ভাইপোদের কাছ থেকে। সে যা করেছে তা কর্তব্যের জন্যেই করেছে, তার বিনিময়ে হাত পাতা? কক্ষনো না। সুধা আর নরেন্দ্র ছাদে মুখোমুখি একা বসে থাকে বিকালে অনেকক্ষণ। হাওড়ার ঘিঞ্জি শহরে বাড়ির পর বাড়ি, ঘোলাটে আকাশের শামিয়ানা সরিয়ে ঘাটভোগের খোলা মাঠ, খোলা আকাশ, ভিটে মাটি, গরু, তুলসীমঞ্চ, রাস্তা-পুকুর, প্রতিবেশী --- সব ভেসে ওঠে। সুধা বলে, "আমরা আর কোনোদিন দেশে যাব না, না রে?" নরেন্দ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, "এটাই আমাদের দেশ মা এখন।" সুধার মনে হয় তার সারাটা শরীর যেন ফালাফালা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এখানে সেখানে, কিছুতেই জোড়া লাগাতে পারছে না।

        সুধা মারা গেল একদিন গ্রীষ্মের দুপুরে। শেষ কয়েক মাস যা সেবা করল নরেন্দ্র, পাড়া প্রতিবেশীরা বলল, "কপাল করে ছেলে পেয়েছিলে দিদি।" সুধার সুরেন্দ্র আর রমেন্দ্রর মুখটা মনে পড়ে গেল। কেউ খারাপ নয়, পোড়া তো তার কপাল!
        স্বরাজ কাঁদেনি এক ফোঁটাও। তার চোখের জল বোঝার লোক কই সংসারে? সুধা তো চোখ বুজেছে। সুধার মৃত মুখটার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে ছাদে চলে গেল স্বরাজ। তার বুক ফেটে যে অশ্রুপাত হচ্ছে সে শুধু ঠাকুমা বুঝুক, এ জল শুধু ঠাকুমার।
        স্বরাজের চোখে ঘাটভোগের পুকুর। সে আর ঠাকুমা বই আনতে যাচ্ছে অন্ধকারে। ঠাকুমার হাতে হ্যারিকেন, আগে আগে চলেছে। চারদিকে জোনাকি, আকাশ ভরতি তারা। এত তারা, এরা কোন দেশের ঠাকুমা? ভারতের, না বাংলাদেশের?