Skip to main content

ধর্মে বিশ্বাস করা মানে কি?

একটা বইকে ধ্রুব সত্য বলে জানা। সেই বইয়ের প্রণেতা বা কেন্দ্রীয় চরিত্রকে নির্ভুল, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ বলে জানা। সেই সম্প্রদায়ের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানকে সব চাইতে পবিত্র বলে মানা। এই কি মোদ্দা কথা?

না। এর একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। অন্য ওই গোত্রের বইকে অধ্রুব বলে জানা। অন্য বইয়ের প্রণেতা বা চরিত্রকে সংশয়ে জানা। অন্য সম্প্রদায়ের আচার অনুষ্ঠানকে অসত্য, অযৌক্তিক বলে জানা।

এই দুইয়ের এক মিশ্র অনুভূতিতে ধর্ম দাঁড়িয়ে। যার উপর ভিত্তি করে দুটো মানুষ থেকে দেশ বিভক্ত হয়। হানাহানি হয়। এসব কথা আমরা জানি।

আবার সেই ধর্মকে কেন্দ্র করেই উৎসব হয়। তাতে অর্থনীতির চাকা ঘুরে যায়। সেই উৎসবে সিনেমা রিলিজ হয়। বই ছাপা হয়। আরো কত কত কি হয়। তখন আমরা বলি, ওটা ধর্ম নয়। ওটা উৎসব।

এই জটিলতায় সমাজ দাঁড়িয়ে থাকে। অর্থনীতি আর ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে যেহেতু আস্তিক কি নাস্তিকের কোনো দ্বন্দ্ব নেই তাই এই উৎসবে যতটা মানুষের মধ্যে প্রচার চালানো যায় সেই সুযোগ নেওয়ার জন্যে সবাই কাছা খুলে রাস্তায় নেমে পড়ে।

আচ্ছা যদি কেউ কোনো বইকে ধ্রুব না মানে, কোনো চরিত্রকেই সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ না মানে, কোনো আচার-অনুষ্ঠানেও না জড়ায় নিজেকে, তার কি কোনো ধর্ম বিশ্বাস থাকতে পারে?

না, আমি বাউল, সুফি, রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি কারোর কথা বলছি না। একজন সাধারণ মানুষের কথা বলছি। তার কি কোনো ধর্ম বিশ্বাস থাকতে পারে এ সবের বাইরে গিয়ে? সে কি নিজের সব চেষ্টাকে মঙ্গলমুখী করে তোলার প্রেরণা নিজের ভিতর থেকে আপনিই পেতে পারে? কোনো স্বর্গ, নরক, মুক্তি, নির্বাণ ইত্যাদিতে বিশ্বাস না করে? সে কি একা দাঁড়িয়ে বলতে পারে আমার কাজের দ্বারা কারোর কোনো ক্ষতি না হোক। আমার কথায় কেউ আঘাত না পাক। আমি কারোর জীবনে কোনো অশান্তির কারণ না হই। সে কি নিজের যাবতীয় মানসিক, বাচিক আর কায়িক চেষ্টাকে এইরকম শান্ত, নির্দ্বন্দ্ব মঙ্গলের দিকে নিয়ে রাখতে পারে?

আবার একজন সাধারণ মানুষকে তো নানা আঘাত, অপমান, ভয়ের মুখোমুখিও হতে হয়। যে কোনো ধর্মে ওইভাবে বিশ্বাস করে না, সে কি এই সবের মধ্যে নিজেকে শান্ত রাখতে পারে আপনা থেকেই? জীবনের পথে চলতে নানা অন্ধকারের মধ্যে আলোর দিকে মুখ করে থাকতে পারে? যে আলো মানে তার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে একটা আশার অনুভব? কোনো গল্পে বিশ্বাস না করে, কোনো পরিত্রাতাতে বিশ্বাস না রেখে, কোনো আচার অনুষ্ঠানে নিজেকে না জড়িয়ে শুধুমাত্র নিজের চেষ্টাকে উদার, যুক্তিপূর্ণ, সহমর্মি রেখে বাঁচতে পারে সে একা নিজেকে নিয়ে? নিজের বোধকে অখণ্ড রেখে?

এর উত্তর নিজেকে খুঁজতে হবে। শান্ত হয়ে, নির্মোহ হয়ে, অভয় চিত্তে।

তবে হয় তো একদিন এই পৃথিবীতে সত্যিকারের শান্তি আসবে।