Skip to main content
এমন কেন করেন


- দাদা, কটা বাজে?
- তিনটে দশ।

দুপুরবেলা। বিলোচনবাবু হাঁটতে বেরিয়েছেন। মে মাসের কাঠফাটা রোদ্দুর। চারিদিকে পুকুরের জল কমে প্রায় তলানীতে এসে ঠেকেছে। বিলোচনবাবু মাঠের আলপথ ধরে হনহন করে হেঁটে চলেছেন।
- কবিরাজ মশায় চল্লেন কই? মকু ভ্যান থামিয়ে জিজ্ঞাসা করল।
- এই একটু ভানুর বাড়ি যাব রে। সকালবেলা খবর এসেছে ওর ছেলেটার নাকি আবার পিত্ত পড়েছে।
মকু কি ভাবল। তারপর বলল, তা ওবেলা গেলি ভাল হত নি? সে আমিই না হয় ভ্যানে করি...
- আরে ধুর কি যে বলিস, তুই যা, বাড়িতে বউটা একা বসে আছে, নতুন বিয়ে করেচিস, আমি হলুম বাহাত্তুরে বুড়ো.... বলতে বলতে বিলোচনবাবু এগিয়ে গেলেন।
মকু 'হাঁ' করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকল খানিকক্ষণ। তারপর অস্ফুটে বলল, "বউ...!"
বিলোচনবাবু হাঁটার গতি আচমকাই কমে আসল। পুকুরধারে যতি না?
- এই যতে..., বলে রাস্তা থেকেই হাঁক পাড়লেন বিলোচনবাবু। যতি একটা নারকেল গাছে ঠেঁস দিয়ে বিড়ি ফুঁকছিল। দুপুরের ভরা পেটে একটা ঝিমুনিও এসেছিল। হঠাৎ বাজ পড়ার মত আওয়াজ শুনে কোনো ক্রমে লুঙ্গী সামলে, নিজেকে সামলে, 'যে আজ্ঞে' বলে বিলোচনবাবুর সামনে এসে দাঁড়াল। আরেকটু হলেই পুকুরে পড়ছিল আর কি!
- হ্যাঁ রে গেল মাসে তুই যে ওলাওঠায় মরেছিলি, আবার বাঁচলি কি করে রে?
যতি ব্যাপারটা কিছু বোঝার আগেই কেন জানি দৌড়াতে লাগল। সে নিজেও বুঝছে না কেন দৌড়াচ্ছে, তবু দৌড়ে গেল...
বিলোচনবাবু বললেন, যাঃ দিনমানেই ভুত দেখলাম!
আরো খানিকটা এগিয়ে বেশ ক্লান্ত হয়ে একটা খেজুর গাছের তলায় বসলেন। বসে কাঁধের গামছাটা দিয়ে হাওয়া খাচ্ছেন, এমন সময়, "ও কবরেজ জেঠু!" ডাক শুনে গাছের ওপরের দিকে তাকালেন।
আরে বিনোদের ছেলেটা না? এত দুপুরে গাছে চড়ে কি করছে? ভিরমি খাবে তো!
তিনি বললেন, অ্যাই ঘোঁতে নাম গাছ থেকে!
ঘোঁতে তার দিকে একবার তাকিয়েই হনুমানের মত একলাফে সামনের সেগুন ডালে বসল। তারপর তরতর করে নেমে তার কান ঘেঁষে ছুটে পালাল।
কি হচ্ছে এ সব! ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন।
ঘুম যখন ভাঙল তখন চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তিনি এক হাতে মুখের লালা মুছে উঠতে যাবেন, এমন সময় সামনে দেখেন মকু, ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে।
- আসেন কত্তা, ওঠেন।
বিলোচনবাবু ভ্যানে উঠলেন।
ভ্যান চালাতে চালাতে মকু বলল, "কেন যে দিন-দুপুরে তেনাদের দেখা দেন কত্তা! যতিটার ধুম জ্বর। এখন বাঁচলে হয়।"
বিলোচনবাবু মুখটা কাঁচুমাচু করে বললেন, "মনে থাকে না রে! পৃথিবীটার উপর বড্ড মায়া রয়ে গেছে এখনো। পঁচাত্তরটা বছর কাটালাম এদের সবার সাথে। আজ এরা আমাকে আর না চাইলেও আমি যে ওদের খুব চাই, এটাই বোঝাতে পারি না। সে ছাড়, তা ভানুর ছেলেটা কেমন আছে কিছু জানিস?"

(ছবিঃ সুমন দাস)