Skip to main content

আসতেই হত। আজ এক বছর কমপ্লিট হল ফ্ল্যাটটায় আসা। ঈশান ঘুমাচ্ছে। কনক এক কাপ কফি নিয়ে বালকনিতে এসে বসল। সকাল ছ'টা। 

     কেউ খারাপ ছিল না। সবাই ভালো। শ্যামনগরের বাড়িতে ঘরের অভাবও ছিল না। তবে বিরাটি কেন? 

     এই কেন-র কোনো সাদা উত্তর নেই। আর উত্তর দেবেই বা কেন? না-ই বা দিল। কিন্তু এক বছর পরেও একই কথা নিয়ে মাথায় নাড়াচাড়াই বা কেন? 

     কনক রাস্তার দিকে তাকিয়ে। লোক নেই তেমন। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। ভালোই করেছে সে। বেশ করেছে। ইচ্ছার কোনো কেন হয় না। দায়িত্ব? 

     মাথার পিছনটা টাটাচ্ছে। প্রেশার বেড়েছে? ওষুধ খেয়েছিল কাল রাতে? মনে পড়ছে না। 

     দায়িত্ব? আছে। কিন্তু সেটাই তো শেষ কথা নয়। সে নিজের মত করে থাকতে আর ঈশানকে রাখতে চেয়েছিল। পেরেছে? 

    না। কিন্তু সেটা অন্য কথা। মানুষের নিজেকে চিনতে সময় লাগে। ঈশানকে বিয়ের আগে দু বছর আর বিয়ের পর চার বছর পেয়েছে। স্বীকার করছে, চিনতে পারেনি। কিন্তু নিজেকেই বা চিনেছে কতটা! মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রায়োরিটি বদলে যায়। প্রায়োরিটি বদলে গেলে মানুষটা আগের মত থাকে না। আজ থেকে চার বছর আগের প্রায়োরিটি আর আজকের মধ্যে অনেক তফাত। ঈশানেরও চেঞ্জ হয়েছে! তবে?

     কফিটা বেশি মিষ্টি হয়েছে। প্রায়োরিটি কে ঠিক করে? চারপাশ, ম্যাচিওরিটি… আর ঈর্ষা? 

     বুকটা ভারি হয়ে গেল। মাথাটাও। ঈর্ষা। আছে, স্বীকার করে। কার নেই! হিপোক্রেসি ভালো লাগে না।

     রাস্তা থেকে খবরের কাগজ ছুঁড়ে দিল। খেয়াল করেনি কনক বসে আছে। তাড়াতাড়ি উঠে লুপে নিতে গেল। নইলে ভিজে যাবে। হল না। ভিজে মেঝেতে পড়ল। ভিজল। 
  হঠাৎ রাগ হল। ভীষণ রাগ। "দেখে ছুঁড়তে পারেন না!!" চীৎকার করে বলল। নিজের কানেই অড লাগল। 

      ঘরে কিসের আওয়াজ হল। ঈশান এত সকালে তো ওঠে না রবিবার। তবে? 

     কি গো এত সকালে! 

    বাহ, কাল বললাম না মায়ের চোখের ডাক্তারের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে…

    ওহ হ্যাঁ, কল্যাণীতে..

    ঈশান স্নানে গেল। কি খেয়ে যাবে? 

    কনকের বিরক্ত লাগছে। সকালটা এরকম তো হওয়ার ছিল না। তবে? বারাকপুরে দিদির বাড়ি যাবে? 

 

=======

 

ঈশান বারাকপুরে কনককে ড্রপ করে বেরিয়ে গেল। ঈশান ব্রেকফাস্ট না করেই গেল। কনককে জিজ্ঞাসাও করবে না কেন করলে না কিছু। সবার জেশ্চারের একটা প্রায়োরিটি লিস্ট থাকে। 

     অঞ্জনা কনকের মাসির মেয়ে। ইকনোমিকস পড়ায় কলেজে। বিয়ে করেনি। 

     কনক সারাদিন অনেক কথা বলল। শুনলো। দিদির একটা ব্যাচ ছিল এগারোটা থেকে দুটো। কনক ঘুমালো। মাথাটা ধরে আছে। 

     আচমকা দুপুরে না খেয়েই চলে এলো। দিদিকে বলল একটা জরুরি কাজ আছে। বোকাবোকা শোনালো। তবু বলল। অসহ্য লাগছে। সব যেন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। সুখ, স্বপ্ন, ভালোবাসা… সব সব। শরীরটাও নিজের মত চলে। না সুখে সাড়া দেয়, না বিষাদে। শরীর, মন সবাই একা করে দিয়েছে কনককে। সবাই নিজের চলে। ঈশান সুখী নয়। সেও সুখী নয়। ডিপ্রেশান। কারণ কি?

      কনক সব প্রায়োরিটি বদলে বদলে দেখেছে। কিছুতেই ঠিক হয় না। কিউবে সব রঙ একদিকে আসে না জীবনে। কিউব মাঝপথে রেখে চলে যাবে? তাই হয়?  

     ঈশান ফোন করেছিল। কনক বলেনি সে বিরাটি চলে এসেছে। পরে বলবে। 

    ঘুম ভাঙল। ঈশানের চারটে মিসড কল। হোয়াটসঅ্যাপে লেখা - আজ আসবে না। ও বাড়ি থাকবে। দাদার মেয়েটার জ্বর, তাকে ছাড়ছে না। চাইলে কনকও যেন চলে যায়। একটা সেল্ফি পাঠিয়েছে জুঁইয়ের সঙ্গে। থ্রিতে পড়ে।

  যাবে না। পুরো কিউবটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ডিপ্রেশান। সামনের মাসে আবার বসতে হবে ডাক্তারের সঙ্গে। মনের ডাক্তার। ভালো লাগে না। এগুলো ব্যক্তিগত কথা। ব্যক্তিগত ব্যর্থতা তো! সে তো মেনে নিয়েছে, তবে? 

    পাখাটা তিনে করা। এসি কুড়িতে। ভালো বৃষ্টি হচ্ছে। নিম্নচাপ। কাল ছাড়বে। যদি না ছাড়ে! যদি কালও ঈশান না ফেরে! যদি আরো আরো বৃষ্টি বাড়ে! 

    কপালে ঘামের বিন্দু জমছে। বুকটা ধড়ফড় করছে। এখনই শ্যামনগর যাবে? কিম্বা যাদবপুর? বাপের বাড়ি! ওহ, মা বাপি তো ভাইয়ের ওখানে, ভূপাল। 

    ঈশান ফোন ধরল না। কেন? ঈশানের বাজে স্বভাব ফোন সাইলেন্ট করে রাখা। মাকে করবে? দাদাকে? বউদিকে? ঈশান রাগ করেছে? কিন্তু কেন? সেও তো চেয়েছিল….রাজী তো ছিলই…তবে?

    সব ফাঁকা লাগছে। সব অর্থহীন। মাথাটা শূন্য। সব ভাসছে। 

    কনক উঠে সব ঘরের আলো জ্বেলে দিল। আবার ওই ইচ্ছাটা হচ্ছে। আবার। বারবার চোখ যাচ্ছে ওয়ারড্রোবের দিকে। একটা নীল ওড়না। নীল রঙ ভীষণ প্রিয়। ভীষণ। 

     বাইরে তুমুল বৃষ্টি। কনক সব আলো নিভিয়ে দিল। মোবাইল সুইচ অফ করে দিল। সব শূন্য। সব। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ভীষণ বৃষ্টি। সব অনর্থক। অবান্তর। সব। সব। সব।