আবার এসেছে….
দাঁড়া দেখছি…..
গায়ে কিছু নেই। সারা গা ময়লায় কালো। একটা ফুলপ্যান্ট, দশ জায়গায় ছেঁড়া। কোমরের এত নীচে ঝুলছে যেন যে কোনো সময়ে খুলে যেতে পারে। এদিকে প্যাণ্ডেল ভর্তি ছেলেমেয়ে। এত এত মহিলারা। ছিঃ ছিঃ। কেউ কেউ তো হাসছেও।
তুমি এখানে কেন?
লোকটা হাসল। বলল, আমি ঘুমাই তো ওখানে, এই দোফোরটুকু… আপনি একটু মাকে বলেন, আমার বেশি জায়গা লাগবে না….
পাশ থেকে একজন বলল, হ্যাঁ দাদা, দুপুরে এই মালটাকে এখানে ঘুমাতে দেখেছি কয়েকবার… শালা এমন হুজ্জুতি করবে জানলে তখনই হুড়কো দিয়ে, পাছায় দুটো লাথি মেরে বার করে দিতাম…..
লোকটা আবার হাসল…. বলল, শুই একটু?
একজন বলল, দাদা একেই আমরা গেলবার স্বামীজির জন্মদিনে কম্বল দিয়েছিলাম…
লোকটা হেসে বলল, কপালে সন্দনের ফুঁটাও…. কম্বলটা নাই… রাতে স্টেশানে শুই তো… ভোরে দেখি আরে কলা!… শীত লাগে কেন? দেখি কম্বল নাই…. শুই একটু? মায়ের বাঁদিকে দেখেন জায়গা আছে… একটু ফাঁক.. ওতেই হবে… খাবারটাবার, কম্বলটম্বল দিতে হবে নানে….
একটা কানের বারান্দায় দেব… যাও… ভাগো… দেখছ না পুজো হচ্ছে….
লোকটা উবু হয়ে বসেই থাকল। চোখের কোণে জন্মের পিচুটি জমে। দাঁতগুলো মানুষের কে বলবে.. একটা কঙ্কাল যেন….
একজন বলল, এতবড় মহামারিতে এত এত ভালো মানুষ চলে গেল দাদা… এইগুলো যে কেন সাবাড় হল না কে জানে…. অথচ পাড়ার চক্কোত্তিদা… কি বয়েস হয়েছিল বলো….
বউদি তো এবারে পুজোয় আর আসবেন না বলো… কি কাজটাই না করত…
বিধবা….
সেই….
কিরে গেলি? কিরকম মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছে দেখুন… যেন শালা গিলে খাবে… সব পোটেনশিয়াল রেপিস্ট দাদা….
পিটিয়ে বার করে দেওয়া হল। কেউ কেউ বলল, শালা এত মার খেয়েও মুখে কোনো বিকার দেখলেন?
সবাই এসে হাত স্যানিটাইজ করে বসল। একজন হাসতে হাসতে বলল, বলে কি দাদা বিসর্জনটা কবে?
শালা আবার শুতে আসবে তো…..
আসুক… গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো করে ছাড়ব…..
পুজো শেষ হয়েছে কবে। সেবার বর্ষা হল প্রায় সারা জানুয়ারি মাস জুড়ে। এমন বৃষ্টি শীতে বহুকাল কেউ দেখেনি।
লোকটা বাঁধানো মণ্ডপেই পড়ে রইল দু’দিন। বৃষ্টির আওয়াজে কেউ তার শেষ গোঙানির শব্দটুকু পায়নি। বারবার বলছিল, মা একটু সরে দাঁড়াও…. শুই… শুই… খাবার লাগবে না… কম্বলও না… একটু শুই….. বৃষ্টির আওয়াজ শুনে বলছিল… ওরে আসতে ঢাকটা বাজা না… একটু ঘুমাই… নইলে খিদে পাবে যে… শীত করবে যে….
ততক্ষণ বলে চলল, যতক্ষণ না শেষ বাতাসটা ফুসফুস থেকে বেরিয়ে বাঁধানো মণ্ডপের ছাদে ধাক্কা খেয়ে, ঘুলঘুলি দিয়ে শীতের মেঘলা আকাশে মিশে গেল….