Skip to main content

 

 

 

আজ ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২০. আকাশে বিস্কুটের কোনা খাওয়া গত পূর্ণিমার চাঁদ।

      আপনারা আমায় চেনেন, খেয়াল করেন না। আমি করি। কারণ আপনাদের গতিবিধি খেয়াল না রাখলে আবার আমার চলে না। কখন কি ছুঁড়বেন। কখন আপনার চোখে আমার জন্য স্নেহ, কখন রাগ, কখন ঘেন্না, কখন ভয়, সব খেয়াল রাখতে হয়।

      একটা ক্যালেণ্ডার বদলানোর জন্য আপনারা এত কেন নাচোন কোঁদন করছেন আমার ঠিক মাথায় ঢুকছে না। চারদিকে যে ভাষায় গান বাজছে কে বলবে এই ভাষাকে নিয়ে আপনাদের নাকি এত ছুঁতমার্গ। এ ভাষা নাকি আপনাদের ভাষা ভুলিয়ে দেবে। মা গো মা, পারেনও আপনারা! আপনাদের ভাষার মুখরক্ষা করে চলেছে এক "টুম্পাসোনা", তার অসামান্য বাণী আর সুরের মোহে।

      সারা বছর আপনাদের অবস্থা আমাদের থেকে খারাপ ছিল। দীর্ঘদিন তো রাস্তায় আপনাদের দেখা পাওয়া ভার ছিল, আপনাদের ভাষায় লকডাউন। আমরা দিব্যি ঘুরেছি। আজও ঘুরছি। আপনারাও ঘুরছেন, তবে মুখ ঢেকে। চারদিকে যা শুনছি আগামী বছরটাও এই বছরের কপি-পেস্ট হতে চলেছে বলে মনে হয়, যা নতুন জাতের ভাইরাস এনেছেন শুনলাম! কি যে হয় আপনাদের বুঝি না। নিজেদের বাড়িতে তো যত আমাদের বিদেশী গোত্রের মাল না আনলে আপনাদের নাকি মান থাকে না। তাদের নিয়ে আপনাদের আদিখ্যেতাও কত। আমরা যেন নেই, আমাদের বেলায় আপনারা রেসিস্ট না, স্পিশিস্ট, মানে প্রজাতিভিত্তিক বৈষম্যমূলক আচরণ যত। যা হোক, এই সবে আমাদের গায়ে লাগে না। কিন্তু সেই বিদেশি ভাইরাসে আপনাদের এত অনীহা কেন বুঝি না। অবশ্য আপনাদের লয়্যালটি নিয়ে আর কি বলা। এই যে লকডাউন গেল। এই যে চায়ের দোকানের সামনে আমার মা আমায় জন্ম দিল, বড় করল, লাইনে কাটা পড়ল। সেই দোকান লকডাউনে বন্ধ থাকল কতদিন। আমি কি তা বলে সে দোকান ছেড়ে গেলাম? গেলাম না। একে বিশ্বস্ততা বলে। জানি এ সব লকডাউনে রোদন, তবু বলা আর কি। আর আপনাদের কারোর কারোর ভাষা! বাপরে বাপ! আমাদের ঘেউ ঘেউ তো বীণাসম বাজা উচিৎ আপনাদের কানে।

      শেষ করি একটাই কথা দিয়ে। আপনারা জানেন হয় তো কেউ কেউ, আমরা ওপারে চলে যাওয়া মানুষদের দেখা পাই, কথা শুনতে পাই। ওনারা কিন্তু ভালো নেই জানেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মাঝে মাঝেই। আপনারা উত্তরসূরী হতে পারলেন না, খালি ওদের নিয়ে মিছিমিছি গর্বের বোঝা বওয়া গর্দভই রয়ে গেলেন।

      যা হোক। আমি ঘুমাই। আপনারা দয়া করে মাঝরাতে আবার টাল সামলাতে না পেরে আমাকে মাড়িয়ে যাবেন না। প্রতি বছরই করেন। গেলেন, অথচ টাল রাখতে শেখেন না। এখন ঘুমিয়ে নিই, রাতে তো আবার সজাগ থাকতে হবে। আপনারাও একটু সজাগ থাকতে শিখুন না।