সৌরভ ভট্টাচার্য
28 March 2020
একজন চাষী, সারাটা দিন খেটে, প্রচুর পরিশ্রম করে, এক ঝুড়ি ফল নিয়ে এলো মালিকের বাড়িতে। মালিক পরিষ্কার হাতে কয়েকটা তরতাজা ফল বেছে তুলে নিল। কয়েকটা তার পছন্দ হল না, রেখে গেল। ঝুড়ির গায়ে লেগে থাকা ধুলো-কাদা সে নিল না, ক্ষেতের গন্ধকেও খেয়াল করল না। শুধু কয়েকটা তাজা ফল নিয়ে ঘরের মধ্যে মিলিয়ে গেল। ফল ঝুড়ি-ধুলোকাদা-বিমর্ষ মুখে চাষীর দিকে তাকালো। চাষী মাথা নাড়ল, যেন বলতে চাইল, ও এমনই।
সে বাড়িতে আরেকজন ছিল, মালিকের অনুজ, সে আবার অন্যরকম। সে চাইছিল সব ফলগুলো হাতে তুলে তুলে দেখে, ঝুড়িতে লেগে থাকা কাদাগুলো হাতে নিয়ে দেখে, ঝুড়ির গায়ে লেগে থাকা ক্ষেতের গন্ধে একটু মাতে।
কিন্তু কিচ্ছু হল না। মালিক তার ভাব বুঝে এমন চোখ পাকালো যে সে তাড়াতাড়ি মালিকের পিছু পিছু চলে গেল ঝুড়িটার দিকে আড়চোখে চেয়ে।
চাষী আবার সে ঝুড়ি মাথায় তুলে নিল। মালিকের পছন্দ না হওয়া জিনিস এখন তার ঘরের সামগ্রী। তার ঘরের মধ্যে সব জমিয়ে রেখেছে সে, যা কিছু মূল্যবান, ফেলনা, নিতান্তই এলেবেলে, সব কিছু।
মাঝে মাঝে মালিককে লুকিয়ে মালিকের অনুজ আসে তার ঘরে। সে চাষীর সাথে খেলা করে। সে বলে, এটা পেড়ে দাও, ওটা পেড়ে দাও, ওই ঢাকনা খুলে দেখাও কি আছে, ওইটাতে কি আছে?
চাষী তাকে ভাঙা ঝিনুক দেখায়, কড়াইশুঁটির মধ্যে হাঁটা সবুজ পোকা দেখায়, তারা মাঠে শুয়ে কেন্নোর পা গোনে, পিঁপড়েদের সারির সামনে দাঁড়িয়ে দেখে তারা কোথা থেকে আসছে আর কোথায় যাচ্ছে।
চাষী তাকে মনের সুখে এটা ওটা আরো অনেক কিছু হাতে তুলে দেয়, সে খেলা করে। কিন্তু খবর পেলেই আবার বাড়ির মালিক পেয়াদা পাঠায়, তুলে নিয়ে আসে সে অনুজকে।
চাষী আবার সব সরঞ্জাম গুছিয়ে রাখে। আবার কখনও কখনও আসে মালিকের অনুজ।
(নমস্কার পাঠকগণ, এতক্ষণ যে ক্ষুদ্র নাটিকাটি পড়লেন, তাতে মালিকের ভূমিকায় অভিনয় করলেন 'বুদ্ধি', মালিকের অনুজের ভূমিকায় ছিলেন 'মন', চাষীর ভূমিকায় ছিলেন 'প্রাণ', ঝুড়ি, ফল ও মাটির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন 'অভিজ্ঞতাগণ', পেয়াদার ভূমিকায় ছিলেন 'সংস্কার'।
নাটিকাটি কে রচনা করেছেন জানা যায় না, প্রচলিত বলা যায় তাই। নাটিকাটি পরিচালনা করেছেন 'সময়'। অশ্রুত সংগীত পরিচালনায় ছিলেন রুচি।)