বিদ্যাসাগর মহাশয় বোধদয়ে লিখছেন, "ইঙ্গরেজেরা এক্ষণে আমাদের দেশের রাজা সুতরাং ইঙ্গরেজী আমাদের রাজভাষা। এ নিমিত্ত সকলে আগ্রহপূর্বক ইঙ্গরেজী শিখে; কিন্তু, অগ্রে জাতিভাষা না শিখিয়া, পরের ভাষা শিক্ষা কোনোও মতে উচিত নহে।"
খামোখা বোধদয় কেন পড়ছিলাম? এমনিই। বোধদয়ে বিদ্যাসাগর মহাশয় ঈশ্বর থেকে শুরু করে কেরোসিন তেল অবধি কত কিছুরই না সম্বন্ধে ছোটো-ছোটো করে লিখছেন। সমাজ, হিসাবকিতাব, ইন্দ্রিয়, কৃষিকর্ম, ইতরজন্তু, পরিশ্রম-অধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি।
"কতকগুলি সাধারণ বস্তু আছে, তাহাতে সকল লোকের সমান অধিকার; সকলেই বিনা পরিশ্রমেই পাইতে পারে। বায়ু, সূর্যের আলোক, বৃষ্টি ও নদীর জল, এ সমস্ত, ও এরূপ আর আর বস্তুতে সকল লোকেরই সমান অধিকার। এতদ্ভিন্ন আর কোনও বস্তু পাইবার বাঞ্ছা করিলে, অবশ্য পরিশ্রম করিতে হইবে, বিনা পরিশ্রমে তাহা পাইবার কোনও সম্ভাবনা নাই।"
"সমুদ্র ও নদীতে নানাপ্রকার মৎস ও জলজন্তু আছে।"
"হীরার মূল্য এত অধিক যে, শুনিলে বিস্ময়াপন্ন হইতে হয়। পোর্টুগালের রাজার নিকট এক হীরা আছে; তাহার মূল্য ৫,৬৪,৪৮০০০, পাঁচ কোটি চৌষট্টি লক্ষ আটচল্লিশ টাকা। আমাদের দেশে কোহিনূর নামে এক উৎকৃষ্ট হীরা ছিল। সচরাচর সকলে বলে, উহার মূল্য ৩,৫০,০০০০০, তিন কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। এক্ষণে এই মহামূল্য হীরা ইংলণ্ডে আছে।"
"সকলেরই স্পষ্ট কথা কহিতে চেষ্টা করা উচিত; তাহা হইলে সকলে অনায়াসে বুঝিতে পারে। আর যখন যাহা বলিবে, সত্য বই মিথ্যা বলিবে না। মিথ্যা বলা বড় দোষ; মিথ্যা বলিলে কেহ বিশ্বাস করে না; সকলেই ঘৃণা করে। কি বালক, কি বৃদ্ধ, কি ধনবান, কি দরিদ্র, কাহারও অশ্লীল ও অসাধু ভাষা মুখে আনা উচিত নহে। কি ছোট, কি বড়, সকলকেই প্রিয় ও মিষ্ট বাক্য বলা উচিত। রূঢ় ও কর্কশ বাক্য বলিয়া, কাহারও মনে বেদনা দেওয়া উচিত নহে।"
আচ্ছা, আমাদের বাচ্চারা যদি টুইঙ্কল টুইঙ্কল, ব্যা ব্যা ব্ল্যাকশিপের পাশাপাশি এগুলোও শিখে বড় হত, খুব ক্ষতি হয়ে যেত কি? খুব কি সেকেলে সব? খুব কি আনস্মার্ট? খুব কি যাচ্ছেতাই? মানে পাতে দেওয়ারই মত নয়?