আচ্ছা, যিনি যে কোনো বিষয়ে প্রাথমিক প্রশ্ন করেন, তাঁকে কি আমরা ফাণ্ডামেন্টালিস্ট বলতে পারি না? এই যে 'হ য ব র ল' -তে উকিল বলছেন, মোকদ্দমাটা যখন মানহানির, এবং মান মানে কচু, কচুর মূল খাদ্য অংশ যেহেতু মূল, তাই বিষয়ের মূল অবধি যাওয়া উচিৎ, তখন সেই উকিল কি ফাণ্ডামেন্টালিস্ট নন?
এই যে পদার্থ বিজ্ঞানীর দল অণু-পরমাণু ইত্যাদি কত গভীরে গিয়ে পদার্থের মূল ধরে প্রশ্নট্রশ্ন করে একাকার করে দিচ্ছেন। জীববিজ্ঞানীরা মলিকিউলার বায়োলজিতে গিয়ে কত গভীরের মূলতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করে কিসব জিনটিন আবিষ্কার করেও ক্ষান্তি না দিয়ে আরো গভীরে সেঁধিয়ে আরো গভীরের কথা জানতে চাইছেন, তিনিও কি ফাণ্ডামেন্টালিস্ট নন?
আর মনোবিজ্ঞানীদের কথা তো ছেড়েই দিলাম না হয়, তেনারা তো মনের বিশ্লেষণ করে করে মনের এমন তলানিতে এসে ঠেকতে চাইছেন আমার ভয় হয় পাছে সর্বান্তর্যামী স্যার বা ম্যাডামের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি না হয়ে যায়। তাপ্পর আর্কিমিদিসের মত ন্যাংটো ম্যাংটো হয়ে ‘ব্রহ্ম ব্রহ্ম’ বলে চীৎকার করে না পাড়া মাত করে বেড়ান।
তাপ্পর ব্রহ্মাণ্ডের মূলে কি আছে, আগে ছিল, কি হতে কি হল - এ সব ভাবনের লোকও তো আছে। মায় মহাকাশের তারামারাগুলোই ঘেঁটেঘুঁটে একাকার করে দিচ্ছে গো! সব জানা চাই, মূলে কি আছে, আদতে মৌলিক বস্তুটি জগতে কি? তো এনারা তো সব মৌলবাদী বা ফাণ্ডামেন্টালিস্ট হলেন, নাকি?
আরো আছে, যারা ভাষা চর্চা করে ব্যাকরণের মূলে গিয়ে ভাষার মূল দ্রব্যটি কি জানার জন্য ভেবে ভেবে টাক ধরিয়ে ফেললে, তারা? বলি তারাও তো ফাণ্ডামেন্টালিস্ট।
আচ্ছা, এ সব তত্ত্বকথা ছাড়ুন, এই যে দুটো ভালোবাসার মানুষ পাশাপাশি বসে, পার্কে, পাহাড়ে, খাটে, বাসে, ট্রেনে একটু নির্জনতা খুঁজে নিয়ে নিজেদের গভীরের কথা জানতে চাইছে, কার মনে কতটা রঙ পাকাপাকি বসল খুঁজতে চাইছে, এও তো একটা প্রাথমিক খোঁজ, নাকি?
এত কথার মূল কথা হল, তবে শুধুমুধু ওই আক্কুটে, প্রাচীন সব বই-আঁকড়েগুলোকেই ফাণ্ডামেন্টালিস্ট কেন বলা হবে? এটা একটা ন্যায্য প্রশ্ন কিনা? কিম্বা হল কিনা এটা একটা ফাণ্ডামেন্টাল প্রশ্ন? তবে তো আমিও হলুম গিয়ে যাকে বলে ফাণ্ডামেন্টালিস্ট, নাকি? শব্দটার এবার মুক্তি দরকার, বেচারা নিরীহ একটা শব্দ। তাকে এমন বদনাম দেওয়া মোটেও ভালো কাজ নয়। এই আমি বলে রেখে গেলুম। একটা ফাণ্ডামেন্টাল কথা।