Skip to main content

        পুকুরপাড়ে হাঁসগুলোকে ছেড়ে দিয়ে পা ছড়িয়ে ছাতিম গাছটার তলায় বসল বিহান। নীল আকাশ, সাদা সাদা কয়েক টুকরো মেঘ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বিহানের শাড়ির উপর উড়ে এলো কয়েকটা কাশফুলের রোঁয়া। বিহান নিজের পায়ের দিকে তাকালো। কড়া পড়েছে, আঙুলে ফাঁকে ফাঁকে হাজাও আছে। এই শাড়িটা চার বছর আগে পূজোতে কেনা। বিহান শাড়িটার থেকে কুড়ি বছরের বড়। 
        বিহানের বিয়ে যেদিন হওয়ার ছিল সেদিন বরের গাড়ি উলটে বর মারা গিয়েছিল। গ্রামে সবাই বলল, সে অলুক্ষুণে। সেও বিশ্বাস করল। তারপর মা মরল, বাবা তো আগেই মরেছিল, ভাই ছিল একটা, গুজরাটে কাজ করেতে গেল, বিয়ে করল, ছেলে হল। আর এলো না। 
        আ... চই... চই... চই..
        একটা হাঁস সামনের হোগলা বনে ঢুকে যাচ্ছিল।


        এদিকে পেপার মিলটা নতুন। বিকাশ এসেছে বিহার থেকে। বাড়ির জন্য মন খারাপ করে। মায়ের জন্য বিশেষ করে। দুটো বোন বাড়িতে। বিয়ে হয়নি। তার বয়েস পঁচিশ। 
        আজ জ্বর। সে কাজে যায়নি। এই কারখানার পাশেই একটা বড় বাড়ি আছে। তাতে খুপরি খুপরি পঞ্চাশটা ঘর। এক ঘরে চারটে করে খাট, ক্যাম খাট না কি বলে, তাই। বিকাশ পুকুরের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে উপুড় হয়ে। খায়নি সকালে আজ। ইচ্ছা করছে না। বমি আসছে। ঘড়ি দেখল, সাড়ে এগারোটা। ওই মেয়েটা হাঁস চরাতে এসেছে পুকুরের পাড়ে আজ। ওকে রবিবার দেখে, আজ শুক্রবারও দেখছে, ভালো লাগছে। কেন ভালো লাগে? বিকাশ বোঝে না।

        এই পলাশ গাছটা পুকুরের ধারে বহু বছর হল দাঁড়িয়ে। এখন ফুল ফোটার সময় হয়নি। কার্তিক মাস তো সবে। পাতাগুলো চকচক করছে সূর্যের আলোয়। বাতাসে হালকা একটা শীতের আমেজ। পলাশ দেখে জানলা দিয়ে বিকাশের চোখ তার দিকে। পুকুরপাড়ে বিহানের চোখ তার দিকে। পলাশ সব বোঝে। সে বোঝে বলেই তার লাল রঙকে সবুজ পাতার আড়ালে রাখে। নীল আকাশ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, ইশারায় বলে, রঙ ধরছে? পলাশ বলে, হুম, তবে এখনই বাইরে না, বসন্ত আসুক।