গুরু বেণারস যাওয়ার টিকিট কেটে, খাটে বসে, পা দুলিয়ে দুলিয়ে, দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুড়ি চিবাচ্ছিলেন।
শিষ্য অনেকক্ষণ ধরে গুরুর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছিল, গুরু কি ধ্যান করেন? নাম করেন? কি করেন? তারপর থাকতে না পেরে, গুরুকে জিজ্ঞাসা করল, গুরুদেব, আপনি কি ধ্যান করছেন? কিন্তু মুড়ি চিবোতে চিবোতে কেন?
গুরুদেব এক মুখ মুড়ি চিবিয়ে, কোঁৎ করে গিলে, এক ঢোক জল খেয়ে বললেন, কেন ভায়া, গঙ্গা আরতি দেখছি..
দেওয়ালের দিকে ফিরে? মানে দিব্য নয়নে?... শিষ্য খানিক বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল...
গুরু বললেন, তা কেন বাবা, খাটে আমার পাশে এটা কি রাখা?
শিষ্য বলল, টিকিট, ট্রেনের টিকিট বেণারসের..
গুরু বললেন, ওইতেই তো দেখা হয়ে যাচ্ছে বাবা আমার....
শিষ্য বড় বড় চোখ করে বলল, তাই! এও কি সম্ভব?
গুরু বললেন, কেন না? যদি পুরীর টিকিট কাটতাম, তবে সে টিকিট পাশে রেখে এখন নীলাচলে স্নান করতাম....
আপনি ঠাট্টা করছেন গুরুজী..
গুরু হেসে বললেন, ঠাট্টা তুমি করছ বাবাজী... দুইবেলা রাশি রাশি শাস্ত্র পড়েই যদি সব হয়ে গেছে ভাবো তুমি.... তবে আমারই বা দোষ কি? আমিই বা টিকিট কেটেই সব দেখতে পাব না কেন?
শিষ্য বলল, গীতা ভাগবত রামায়ণ পড়ব না তবে, সেকি কাজ না?
গুরু বললেন, এই টিকিট কাটা কি কাজ না?
শিষ্য বলল, অবশ্যই কাজ...
গুরুদেব বললেন, যদি কেউ টিকিট কেটে ঘরেই বসে থাকে...সেকি সম্পূর্ণ, সংগত কাজ?
শিষ্য বলল, না, তবে আমি কি করব?
গুরু বললেন, স্টেশানে যাও, ট্রেন ধরো....
শিষ্য বলল, স্টেশানই বা কই, ট্রেনই বা কই?
গুরু বললেন, পুঁথি সব বন্ধ রেখে রাস্তায় নামো ভায়া... দেখবে সব চলছে... থেমে আছ শুধু তুমিই... অদ্ভুত সেজে... অদ্ভুত ঘোরে....
শিষ্য বলল, ভয় করে গুরুদেব....
গুরু বললেন, দেওয়াল গাঁথলেই তো দেওয়াল ভাঙার ভয়... খিল দিলেই জন্মায় খিল হারাবার ভয়....
শিষ্য বলল, বুঝলাম... কিন্তু আমার ট্রেন বুঝব কি করে?
গুরু বললেন, ভাবার আগে পা এগোবে যেদিকে.... সেদিকে চলে যেতে যেতেই....
শিষ্য বলল, কাল তবে নামি রাস্তায়....
গুরু বললেন, ভয়ের আছে কাল..... প্রেমের শুধু এখনই... আর এমনিই....