Skip to main content

 

 

যার চায়ের দোকান ছিল 

তার দোকান ছিল বাইশ বছরের

 

এখনও তার চায়ের দোকান আছে

তবে নামমাত্র আছে

 

সে ছিল অশিক্ষিত। আনপড়।

 

তার পাশে যে চায়ের দোকান হল

তার দোকান হল এলাহি

নতুন নতুন ডিজাইন আঁকা

নতুন নতুন বিলাস-ব্যসন

আদব কায়দাই আলাদা

সে নাকি অনেক পড়েছে

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের

জল বাতাস খেয়েছে

 

যে অশিক্ষিত

সে দেখে তার দোকানের খদ্দের

আর ওর দোকানের খদ্দেরদের

পোশাক, চালচলন কেমন আলাদা।

তার তো এই টালির ছাদ, কাঠ-কয়লার উনুন, পাতি ভাঁড়,

কিছু পাতি মানুষ। যারা খদ্দের।

 

ঈর্ষা হয়। রাগ হয়।

পোড়া কয়লার শেষ আগুনের মত তাপ হয়।

 

ওদের চায়ের দোকানে চলে ইংরেজি গান

রবীন্দ্রসংগীত। আরো কী সব গান।

তার দোকানে সকালে চলে শ্যামাসংগীত

তারপর লতা-রফি-কিশোর-মান্না

বাংলা হিন্দি মিলিয়ে।

 

এখন অবশ্য চালায় না

ওদের দোকানের গানের যন্ত্র

অনেক সুরেলা। অনেক খর্চা, যদি বা চায় কোনোদিন,

আর কিছু কিনতে সাধ যায় না

শুধু ওই গানের যন্ত্র ছাড়া।

 

পাগল বাসনা।

 

যখন অনেক রাত

এক একদিন এসে দাঁড়ায় 

ওই চায়ের দোকানে সামনে

মনে হয় আগুন জ্বালিয়ে দিই

ইট পাথর মেরে ভেঙে দিই গুঁড়িয়ে

 

পারে না

মন থেকে একটা অভিশাপই দিতে পারে না প্রাণ ভরে,

সে নাকি মারবে পাথর। সে নাকি মারবে ইট। সে নাকি দেবে আগুন।

 

এখন সে অন্য কাজ খোঁজে

বিকল্প জীবিকা

এই বয়সে সাথ দেয় না কেউ

নিজের শরীর, নিজের মন

খাঁচায় বন্দী বুড়ো টিয়াপাখি

নীল আকাশকেও দেখে হলুদ

ডানায় নিমেষ ক্লান্তি

দুই পা, চার পা এগিয়ে

খাটের সঙ্গে চিরকালীন বন্দোবস্ত খোঁজে

 

সে মানুষটা হারিয়ে গেল একদিন

তার চায়ের দোকানে বসল তার বউ

যার গোটা জীবন

পোড়া কয়লা আর তাজা কয়লা বাছতে বাছতে গেছে কেটে

 

সে-ই একা দোকানে বসে

শ্রান্তিকে মাছির মত দুই হাতে সরিয়ে খোঁজে

তাজা কয়লা,

অন্তত একটা, দুটো যদি বা মেলে

দোকান ঘরের পিছনে তার বাড়ি

সেখানে শুয়ে তার স্বামী

রোজ সকালে বলে

   একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে

 

ঘুমিয়ে পড়ে

ডাক্তার বলে, ওর জন্যে ঘুমই এখন ভালো

 

বউ বলে, হবেও বা

পর্দা টেনে, দরজা ভেজিয়ে বেরিয়ে আসে

   থাক ওর ঘর অন্ধকার। কালো।

Category