Skip to main content

 একদিন সব রোগ ভালো হয়ে যাবে। সবাই ঘুম থেকে উঠে বলবে, বাহ্! কই কিচ্ছু তো নেই! সবাই বলবে, সত্যিই জীবন কি আনপ্রেডিক্টেবল না?

ভাইরাস বাধ্য হবে। জীবন বাধ্য হবে। মরণ বাধ্য হবে। আবার আমি দু হাতে জীবন নিংড়ে সুখ বার করব। বলব, এই দেখো, আমিই সব পারি, আমি অজেয়, আমি দুর্দমনীয়, আমিই ব্রহ্ম, আমিই সব।

এইটুকু তো স্বপ্ন। পৃথিবীকে ওলট-পালট করে, জীবনের গলিঘুঁজি সব খুঁজে খুঁজে সুখ বার করে আনা। সে খোঁজে বাধা পড়লে রাগ কার না হয়। অস্থির কার না লাগে। ভীষণ সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কার না মনে হয়?

এসো, ডাকো জীবন। এসো আমায় সুস্থ করো। আমায় উজ্জীবিত করো। আমায় ধৈর্য দাও, সুখ দাও, সাহস দাও। আমার পা দবদব করছে, মাথা টিসটিস করছে। আমি দড়ি বাঁধা ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মত ফোঁসফোঁস করছি। জীবন তুমি শুনছ না কেন? আর কতদিন মৃত্যুভয়ে আটকে রাখতে চাও আমায়? এসো জীবন, জয়ী হও। আমায় ভীষণভাবে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধো। আমার সব বাধা খুলে আমায় উন্মুক্ত করে দাও।

গঙ্গাসাগরে ডুব দিতে উত্তরপ্রদেশ থেকে চাটার্ড বাসে করে আসা লক্ষীকান্তবাবু এই প্রার্থনাই করছিলেন সেফহোমে বসে বসে। মোবাইলে লাইভ দেখানো হচ্ছে পুণ্যস্নান। লক্ষ্মীকান্তবাবুর নাক দিয়ে অল্প অল্প কাঁচা জল আসছে, গলাটা ঢোক গিলতে গেলে অল্প অল্প টাটাচ্ছে। জ্বর নেই। রিপোর্ট পজিটিভ। সেফহোমে হাজার মানুষের কাশির শব্দ শুনতে শুনতে লক্ষ্মীকান্তবাবু টয়লেটে গেলেন। ভালো হচ্ছে না। পেটটা নরম হয়েছে। শ্বাসকষ্ট নেই। লক্ষ্মীকান্তবাবু আবার এসে নিজের জায়গায় বসলেন। পেপার দিয়ে গেল।

মেলা বসেছে। লুচি আলুরদম বিক্রি হচ্ছে। ডিমটোস্ট চা কফির স্টল বসেছে। আহা জীবন, আহা, মুক্ত জীবন। মানুষ সেল্ফি স্টিক নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসছে। লাইনের এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে বিকানির গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। রক্ত লেগে এদিক ওদিক। "এ দৃশ্য সারা জীবনে একবারও দেখার সুযোগ মেলে দাদা", কেউ একজন দৌড়াতে দৌড়াতে বলে গেল। স্টলের লোকেরা বলছে দারুণ বিক্রি, দারুণ।

লক্ষ্মীকান্তবাবু পেপার মুড়ে রাখলেন। এই মানুষেরাই আবার উদ্ধারকাজে এসেছিল। ললিতে কঠোরে মিশ্রিত মানুষের চরিত্র। মানুষ সুখ চায়। অনুকম্পার সুখ। উত্তেজনা, অ্যাডভেঞ্চারের সুখ। এসো জীবন এসো, আমায় মুক্ত করো। আমায় ডাক দাও। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে? মিডিয়া না ভগবান?

কেউ জানে না। কপাল। সবই কপাল। লক্ষ্মীকান্তবাবু চুপ করে বসে। কান্না পাচ্ছে। কবে হবে নেগেটিভ। কবে যাবে ভাইরাস শরীর ছেড়ে। বিন্দু বিন্দু রস হাতের নাগাল ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। ঈশ্বর, ভাগ্য, পূন্য - সব পজিটিভের চক্করে নেগেটিভে রান করছে।

লক্ষ্মীকান্তবাবু মোবাইল বন্ধ করলেন। দীক্ষামন্ত্র জপ করবেন। মালার দানা আঙুলের ডগা ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। ঈশ্বর যেন পদ্মপাতায় শিশিরবিন্দু, এই আছে, এই নেই। না না, ঈশ্বর নয়, মানুষ, জীবন, সুখ, সব বড় চঞ্চল। সব বড় অস্থির। লক্ষ্মীকান্তবাবু ঘুমিয়ে পড়েছেন। মালা ঘুমাচ্ছে বুকের উপর। গলার কাছে সংসার পেতেছে ওমিক্রন। তারা ঘুমায়নি। অল্প অল্প বংশবিস্তার করতে করতে বলছে, কাশো লক্ষ্মীকান্ত, কাশো, আমরা অন্যদেহে যাই। আমাদের সাম্রাজ্য বিস্তার হোক।

লক্ষ্মীকান্ত কেশে উঠলেন।