Skip to main content
arjun

তখন অর্জুন ভয়ংকর কনফিউজড। পারিবারিক সংকট। চিত্তের সংকট। কর্তব্য স্থির করা দায়। এ গল্প তো আমরা জানি। তখন কত কথা হল দুজনের। সে তত্ত্বকথা নিয়ে কত আলোচনাও হল। মোদ্দা কথা, সে সবকে ধর্মের কথা বলে কত নিয়মকানুন গড়ে আলোচনাও করা হয়ে গেল।

      সেখানে একটা কথা কৃষ্ণ বারবার করে বললেন, স্বধর্মের কথা। এখানে বলে রাখা দরকার, ধর্ম মানে কিন্তু ওসব পুজো-আচ্চা, রীতিনীতি, কীর্তন উপোস কাপাস না। ধর্ম মানে এখানে অনুভবী দর্শন। যার যেমন বিশ্বাস। মনের গতি। অর্থাৎ কিনা বৈচিত্র।

      তো কৃষ্ণ বললেন, স্বধর্মে মৃত্যুও শ্রেয়, কিন্তু পরোধর্ম ভয়াবহ। অর্থাৎ কিনা আমার স্বভাবগত যে ভাব, তার বিরুদ্ধে যদি যেতে চাই তা আমার পক্ষে অহিতকর।

      তো সেই আমার স্বধর্ম কি আমার ভালোবাসা? বড় কঠিন কথা। কান্ট মহাশয় বলছেন যেখানে কর্মের উদ্দেশ্য ও উপায় এক হয়ে যায় সেই হল জাস্ট, অর্থাৎ ন্যায়। মানে আমাদের ভাষায় ধর্ম। কারণ ধর্মের ইংরাজি শব্দ রিলিজিয়ন করলে তো বিপদ, সে অর্থে রিলিজিয়ন মানে হল মত।

      তো দার্শনিক কাণ্টের মতে আমার উপায় ও উদ্দেশ্য সমান হয়ে গেলেই হল। এ তত্ত্ব তো সে পওহারিবাবাও শিখিয়েছিল বিবেকানন্দকে - যন সাধন তন সিদ্ধি - যাই উদ্দেশ্য তাই উপায়। এইতেই যত মনের বিকারের নাশ। অর্থাৎ কাণ্টের 'এন্ড থিওরি' আর সে গুহাবাসী 'যন সাধন তন সিদ্ধি' তত্ত্বের জনক পওহারিবাবার থিওরি তো একই দাঁড়ালো।

      তবে কথা হল এই স্বধর্মের তত্ত্বে সব তত্ত্ব এসে মিলে দাঁড়ালো। করুণা, সত্য, প্রেম - এসবই ভালো কথা, কিন্তু এসবের চাইতে বড় কথা হল স্বধর্ম। আমার স্বভাবের সঙ্গে যে ভাব মিশে গেল সেই ভাবেই আমার চলার পথ। কিন্তু কিভাবে?

      আমার আছে ইন্দ্রিয়ের জগত, যুক্তির জগত আর অনুভবের জগত। এই তিন জগতের মধ্যে যদি একটা সংহতি না থাকে তবে তো নিজের মধ্যেই আমি শতধা। আমায় দিয়ে কোন কাজ হবে? কিন্তু আমার তিনদিকই যদি আমার কোনো এক প্রবণতার সঙ্গে মিশে যায়, তখন চলতি কথায়, আমি সেই অবস্থায় ডুবে যাই। লোকে কথায় বলে না, ও পুরো ডুবে আছে। এ সেই ডুবে যাওয়া। যাকে আজকাল বলে - ফ্লো।

      এই ক্ষুদ্র গাছটাকে দেখে মনে হল, এত বড় আকাশ, এমন সুদূর দৃষ্টি ভাসানো দিগন্ত, এত বড় বড় বৃক্ষের মধ্যে সে যদি দাঁড়িয়ে থাকে তবে সে তার স্বকীয়তায়। স্বধর্মে। এইটুকুই তার গর্ব, তার পরিচয়। কেউ যদি এসে বলে, আমি গাছকে যেভাবে ঠিক বলে জানি সেটাই হল ঠিক গাছ, তুমি নও, তবে তা হাসির কথা হয়ে যায়। এমন লোক যে নেই তা তো নয়। স্বধর্ম যেমন আছে ধর্ম-সংকরও তেমন আছে। মানে দরকাঁচা। মানে রামকৃষ্ণের ভাষায় 'একগোয়াল ঘোড়া' বলা লোক। সেও তো আছে।

      একদেশী ভাব এখানকার নয় - রামকৃষ্ণদেব বলতেন। আসলে এ ভাব ভারতের কোনোকালেরই নয়। ভবিষ্যতেও হবার নয়। কেউ জোর করলেই তো আর হল না! তা বলে কি পূর্ণগ্রাস, খণ্ডগ্রাস, বলয়গ্রাস গ্রহণের কথা কি শুনিনি? সেও আছে। তবে তা ক্ষণকালের। চাঁদ আর তার আলোই চিরকালের। বাকি গ্রহণ যদি লাগে, তবে তা ছেড়েও যাবে। সময়ের অপেক্ষা। স্বধর্মেই জগত বাঁচে, ধর্ম সংকরে না।