তুমি আমি একই রুটের বাস। একই রাস্তায় শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা চলেছি। খানাখন্দ, উঁচুনীচু রাস্তা, কখনও সমান। ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে তুমি আমি পাশাপাশি, কখনও একই দিকে যাচ্ছি, কখনও তুমি যাচ্ছ আমি আসছি, কিম্বা আমি যাচ্ছি তুমি আসছ। আমাদের চালক, কন্ডাক্টর আলাদা। যাত্রীদের মত আমাদের কর্তব্যগুলো কখনও এক, কখনও আলাদা আলাদা। কোনো কর্তব্য শেষের মাথায় আমি, তুমি তখন তোমার কর্তব্য শুরু করছ। কিম্বা আমি আমার কর্তব্যের শুরুর মাথায় দেখলাম, তুমি তোমার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছ।
আমাদের কথা তত হয় না, যতটা কথা হওয়া উচিৎ বলে আমরা ভাবি, কিম্বা কথা বলার জন্য যতটা চাপ অনুভব করি। আমাদের কথা হয় ইশারায়। যেমন সেদিন ভীষণ বৃষ্টি, আমি ভিজছি ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে, তুমিও দাঁড়িয়ে ওদিকে। আমায় ইশারায় বললে, তাকাও মাথার উপর!
দেখলাম দুটো ঘুঘু পাখি ভিজে পাশাপাশি বসে। থেকে থেকে কাঁপছে। আমি কিছু হয় তো বলতাম, তোমার সিগন্যাল হয়ে গেল। তুমি বেরিয়ে গেলে। একরাশ কালো ধোঁয়ার বিভ্রান্তি আমার মাথায় জন্মিয়ে, কি বলা উচিৎ ছিল আমার!
সারাদিন কাজের পর, তুমি এক ডিপোতে ফেরো, আমি আরেক ডিপোতে। হয় তো আমাদের মধ্যে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের দূরত্ব, তবু যাওয়া হয় না। অনেক আড়াল। অনেক বাধা। তোমার আমার মালিক আলাদা। আমাদের আলাদা আলাদা হিসাবের কাছে জবাবদিহি। বাধা। সারারাত তোমার চোখে ঘুম নেই। আমারও। আমার ডিপোর ভাঙা টিনের ফাঁকে যে চাঁদের আলো, সে তোমার ডিপোর ছাদেও। তোমার ডিপোর ছাদে যে বৃষ্টির জলের জলতরঙ্গ, সে আমার ডিপোর ছাদেও। এক এক সময় মনে হয় সব বাধা ভেঙে বেরিয়ে যাই। হয় না। কেন হয় না জানি না!
সারাটা জীবন আমরা একই রুটের বাস থেকে যাব। এমনই পাশাপাশি, মুখোমুখি, বিপরীতে চলব। দেখা হবে। তুমিও জানবে আমি আছি, আমিও জানব তুমি আছ। কিন্তু কেউ কোনোদিন জানবে না। নাই জানুক। ক্ষতি নেই। আমরা জেনেছি। এইটুকুতেই বাকি জীবনটা কেটে যাবে।