সারারাত আকাশই পারে না সব তারা চাঁদ এক জায়গায় রাখতে, এদিকে ওদিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেয়। আর তুমিই নাকি সব গুছিয়ে এক জায়গায় রাখবে। যতসব পাগলের মত কথা।
সবক’টা ঘুঁটে ঝুড়িতে নিয়ে দেওয়াল জোড়া
ঘুঁটের দাগ দেখতে দেখতে জাহ্নবী এই কথাগুলো ভাবছিল। নিজের নাভিটায় হাত বুলালো। মায়ের
দাগ। জন্ম দাগ। পাশের রেললাইনের উপর চাঁদের আলো এসে জাপটে ধরে শুয়ে। জাহ্নবী ওই লাইনে
রক্তের দাগ দেখেছে। কুকুরের, মানুষের রক্ত। রঙ এক।
মশা কামড়াচ্ছে। জাহ্নবী লাইনের পাশে
বসে বিড়ি ধরালো। আকাশ আর সংসার, দুটোই বড্ড দূরের এখন। জাহ্নবীর পাশের বোঁচকায় মদের
বোতল। রোজ থাকে। শরীরের ভিতরে ঢুকে যাবে যখন তখন জাহ্নবী অন্য জাহ্নবী হয়ে যাবে।
জাহ্নবী বাড়ির দিকে ফিরছে। বস্তির
দিকে। পুকুরের ধারগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে। সামনেই ছটপুজো। জাহ্নবীর দুটো হাত ভগবানকে
দেখলে এমনিই জড়ো হয়ে যায়। এখনও হল। ব্যাগের ভিতর রাখা বোতলটা ঠং করে উঠল থালায় লেগে।
জাহ্নবী লজ্জা পেল।
এখন মাঝরাত। জাহ্নবী মাঠে বসে। সামনে
পুকুর। আকাশে তারা আর চাঁদ সরে সরে যাচ্ছে। সকাল হওয়ার অপেক্ষা করে না জাহ্নবী। ভোর
হলেই ঘুমিয়ে পড়ে। বেলায় ওঠে। তারপর হাস্পাতালে যায়। ড্রেন পরিস্কার করতে।
জাহ্নবী তারা গুনছে। এখন নেশা তুঙ্গে।
চাঁদটা মুঠোয় রেখে শুধু তারা গুনছে। চাঁদটা মুঠোয় রাখে নাতির জন্য। অল্প অল্প চাঁদের
আলো আঁচলে বেঁধে আনে। নাতির জন্য জমায়। নাতি এলে চাঁদ হাতে তুলে দেবে বলে। কিন্তু সকাল
হলেই আঁচলে মদের গন্ধ। চাঁদ থাকে কই? একদিন থাকবে। একদিন জাহ্নবী জিতে যাবে।
জাহ্নবী শুতে যাচ্ছে, হঠাৎ চীৎকার
শুরু হল বস্তিতে। একজন কাটা পড়েছে রেলে। জাহ্নবী একজনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কি
গো, মানুষ, গরু না কুকুর?
সে খিস্তি করল। জাহ্নবী হাসল। জানে
না সবার রক্তের রঙ এক। জেনে যাবে।
মুঠোয় চাঁদের আলো নিয়ে শুতে গেল জাহ্নবী।
নাতির হাতে একটা গোটা চাঁদ তুলে দেবে আকাশ ফাঁকা করে। একদিন জিতে যাবে সে।