নিদ্রামগ্ন তীর্থযাত্রীগণ
নিদ্রাহারা তারকামালা রহিয়াছে চাহি, যেন সশস্ত্র প্রহরী ওরা
বিস্তীর্ণ মরুভূমি মাঝে,
দ্বাদশ বর্ষীয়ান বালক এক জাগিল সহসা তীর্থযাত্রী মাঝে
দেখিল পুবাকাশে শুকতারা, মাতৃদিঠিসম রহিয়াছে চাহি
তাহার মুখের পরে
"পিতা?”
অস্ফুটে ডাকিল মাতৃহারা পূত্র ব্যাকুল নয়নে চাহি চারিধারে ত্রাসে।
প্রভাত শীতল বায়ু মাতৃআলিঙ্গনসম আচ্ছাদিল কোমল তনু তাহার
কহিল, "ভয় নাই, ওই দেখো তব পিতা,
বিশ্বপিতার ধ্যানমগ্ন, জপিছে তাঁহার নাম নিবেদিয়া সর্ব মন-প্রাণ তাঁর পানে"।
বালক উঠিয়া গেল পিতার সকাশে ক্ষুব্ধ বদনে
কটাক্ষে চাহি নিদ্রামগ্ন তীর্থযাত্রীগণে
নয়ন মেলিল পিতা,
পূত্র বসি পিতার বামদিকে, লইয়া পিতার দক্ষিণহস্ত নিজ ক্রোড়োপরি
কহিল কিছু কথা উষ্ণ ক্ষোভ ভরে
তর্জনী নির্দেশ করি ঘুমন্ত যাত্রীগণে,
"হে পিতা, কেমন পাষণ্ড যাত্রীগণ, পরম পিতার আরাধনায় এতেক শিথিল!
শুকতারা মিলায়ে যায়, রবির উদয় দেখি পুবাকাশ পানে
তবু না জাগিল কেহ,
বিশ্বপিতার সেবায় এমত অবহেলা-
নাহি বুঝি কি কারণে?”
হাসিলেন পিতা, লুকাইয়া মর্মাঘাত সন্তানের কঠোর তিরস্কারে
বলিলেন, "তুমিও আজ আরাধনা না করিও বৎস,
যাও নিদ্রায় আপন সতীর্থসনে
তাহাদের নিন্দিয়া যে অপরাধ ঘটাইলে তুমি অহংকারবশে
বিশ্বপিতা হইলেন বিমুখ সেই ক্ষণে,
জেনো অহংকারসম শত্রু কিছু নাই এ জগতে
সমস্ত সদ্গুণ যাহা এক কোপে নাশে"।
(গল্পটা পবিত্র ঈদ উপলক্ষ্যে একটা অনুষ্ঠানে টিভিতে শুনলাম। মনে দাগ কাটল। তাই এই চেষ্টা।)