Skip to main content

পটার ধুম জ্বর। মাথাটা টোটোর রডে এলিয়ে বসে আছে। ঘোর লেগে আছে। টোটোটা অন্ধকারে দাঁড় করানো, একটা বড় গাছের তলায়। গাছের মধ্যে জোনাকি ফুটছে। পটা মাঝে মাঝে চোখ খুলে তাকাচ্ছে সামনে। কিছু দূরে চণ্ডী মণ্ডপে কীর্তন গাইছে ফুলি। বিশাখা পাল। খোল বাজাচ্ছে নব। হাড় হারামজাদা। হারমোনিয়ামে সনাতন। মিচকে শয়তান। এমনিতে বৈরাগী, কিন্তু সুযোগ পেলে এক বিন্দু রস ছাড়ে না। ফুলি হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে আজ। গলায় গাঁদার মালা। হাতে মাইক। গাইছে, "তোমরা দেখো গো আসিয়া… কমলা নেত্য করে থমকিয়া থমকিয়া"।

=======

ফুলির গলায় সুর নেই। কিন্তু শরীরে টাল আছে। যেন ঝোড়ো নদীর জলে নৌকা। একবার তাকালে চোখ আর বুক বিঁধে থাকে ফুলি। নাভি থেকে বুক চারিয়ে মাথার মধ্যে ছোটে রস। ভালোবাসা। নেশা।

পটা তাকাচ্ছে। আবার চোখ বুঝছে। পটার কেউ হয় না ফুলি। পটার কেই-ই বা কেউ হয়? ফুলি বাজারে মাছ নিয়ে বসে। পটাও। সনাতন আর নব মিস্তিরির কাজ করে। ফুলি বিয়ে করবে না। সব মন সাধনায় দিয়েছে। কিসের সাধনা তোমার ফুলি? ইউটিউব চালিয়ে গান তোলে ফুলি। দুপুরে ঘেমে উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পা দুলিয়ে দুলিয়ে গান তোলে। পটা মেঝেতে বসে থাকে। গানের পদ টোকে। নয় খোলে ঠেকা দেয়। নয় শুধুই দেখে। ফুলি জানে, বাধা দেয় না। প্ররোচনাও না। তবু ছেড়ে যাওয়া যায় না।

=======

দাদা চা খাবে?

নব এসেছে। চায়ের ব্রেক হয়েছে। সনাতন বিড়ি টানছে। ফুলি পাড়ার বউদের সঙ্গে গল্প করছে। আসলে ঘ্যাম নিচ্ছে। ভাও খাচ্ছে। পটার বমি বমি পাচ্ছে। মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।

না, খাবে না চা। নব চলে গেল। পটা শুয়ে পড়ল টোটোর সিটে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে কি?

======

গান শুরু হল আবার। "কানু হারামজাদা"..... কানে আসছে। কে হারামজাদা? গোটা সংসার হারামজাদা। পটার শরীরটা হালকা হয়ে যাচ্ছে। জোনাকিগুলো কাছে এসে গেছে। পটাকে ঘিরে ঘিরে ঘুরছে। পটা ফুলিকে খুঁজছে। একবার ঘাড়টা উঁচু করে তাকালো। পারল না। প্রচণ্ড ঘাম হচ্ছে। বুকের ভিতরটা হাতুড়ি পেটানোর মত হচ্ছে। ফুলির গলা আসছে কানে। যেন কত দূর থেকে।

"দাদা মাল চলবে? দিশি, আনব?"

পটা উত্তর দিল না। সে ঝুঁকে পটার কাছে মাথাটা আনল। নাকের কাছে হাতটা নিল।

"যা চ্চলে!!" বলে পটার উল্টোদিকের সিটে বসে পড়ল। কয়েক ঢোক গলায় ঢেলে বলল, আর মরার জায়গা পেলে না গুরু…. পুজোর তো পোঙা মারা গেল গো…. এখন পুলিশ… পার্টি… ক্যাঁচাল.. আমায় বলল ভালো মাল এসেচে তাই এলাম…. নইলে পোয়াতি বউ বাড়িতে… কেউ আসে?….. ভালো মাল ছিল দাদা…. পেলে না… ভাগ্যে নেই… আমি উঠি…. এসব ক্যাঁচালে নেই আমি…. হরিবোল…. হরিবোল…..

পটা শোনেনি কিছু। সে বড় গাছটার সব জোনাকিদের নিয়ে আকাশে একটা একটা করে তারা সাজাতে ব্যস্ত। তারাদের নিয়ে নাম লিখছে - আমার ফুলি। গোটা সংসারে কত কিছুর আগেই "আমার" শব্দটা লিখতে চায় মানুষ…. কিন্তু পারে কই? ধুয়ে যায় সব। ফুলি সাধিকা হবে। একদিন এই রাস্তা দিয়ে স্বর্গে যাবে। পটা তাকিয়ে থাকবে। পটা পাপী। কাম আর ভালোবাসার পার্থক্য বোঝে না। বিশুদ্ধ ভালোবাসা মানে কি ফুলি? ফুলি যেদিন শরীর ছাড়বে, সেদিন ফুলির আত্মার গন্ধেও নাভি থেকে বুক চারিয়ে মাথায় ভালোবাসার হূল বিঁধবে জানে পটা। তবে সে অনেক পরের কথা। এখন শুধু জোনাকি দিয়ে তারা সাজিয়ে অপেক্ষা। ব্যস, এইটুকুই তো! তুমি সময় হলেই এসো ফুলি… আমি অপেক্ষা করব… এ রাস্তা দিয়েই যেও… এইটুকু কথা রেখো…..