বার কয়েকবার উঠে আবার বসে পড়লেন সুধীরবাবু। পাঁশকুড়া লোকাল এই নিয়ে তিনটে ছেড়ে দিলেন। পেটটায় অস্বস্তি হচ্ছে। সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে ঠাণ্ডাও যা পড়েছে, ইচ্ছাও করছে না। তবে? চা, কফি কিছুর দিকে তাকাচ্ছেনও না। জীবনে অনেক সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া কেন যে এত কঠিন হয়ে পড়ে? আগে এই সময়ে অনেকবার ঈশ্বরকে ডেকেছেন। লাভ হয় না খুব একটা। যার যখন ভূমিষ্ঠ হবার, সে হবেই।
সুধীরবাবু পায়চারি করছেন। বাড়ি থেকে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ফোন এসে গেছে। এবার তো একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। যা হোক, জয় মা বলে এগিয়েই গেলেন।
ওরিব্বাস, একি ভিড়! একটাও ফাঁকা নেই! মানে? এইবার? যাকে অনেকক্ষণ ঠেকিয়ে রাখা যায়, যাকে অনেকবার এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ভুলিয়ে রাখা যায়, সে একবার জেগে গেলে যে প্রবল বেগে জাগে। এইবার?
সুধীরবাবু সারা শরীরে শীতল ঘাম অনুভব করছেন। এ ঘাম সাধারণ ঘাম নয়। মাফলার হালকা করলেন, জ্যাকেটের চেন টেনে নাভি অবধি নামালেন। কিন্তু তারপর? আর কতক্ষণ। সবাই তো সময় দেয় না। বাস্তব আর আবেগের মিল কোনোদিন হয় না জীবনে। এখনও হচ্ছে না। কত কত সুন্দর কথা মনে করতে চেষ্টা করলেন। কাজ হল না। নিজেকে আত্মা ভাবতে চাইলেন। হাজার টানাটানিতেও আত্মা নাভির উপর উঠতে চাইল না। এবার?
সুধীরবাবু বাইরে এলেন আবার। বড় ঘড়িটার দিকে তাকালেন। সাড়ে আটটা। আবার গেলেন। আবার ভিড়। আরো ভিড়। এইবার? কোনো এক্সপ্রেস কিম্বা মেল কিম্বা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ট্রাই করবেন?
তাই করলেন। আর কিছু না পেয়ে কি একটা এক্সপ্রেসে উঠে বসলেন। গেলেন। এইবার? এ যে নাকি খড়গপুর না পৌঁছে থামবে না! হে হরি। এইবার? ট্রেন দাঁড়ালো বটে মাঠে, ঘাটে, এর ওর বাড়ির রাস্তার সামনে সিগন্যাল না পেয়ে, কিন্তু কোনো স্টেশানে আর দাঁড়ায় না। সেই দাঁড়ালো গিয়ে খড়গপুর। সাড়ে এগারোটা।
সুধীরবাবু খড়গপুর প্ল্যাটফর্মে। মনে কোনো ক্ষোভ নেই। কোনো লোভ, কোনো বাসনা, কোনো ঈর্ষা, কোনো রাগ...কিচ্ছু নেই। এ তো পরমহংস অবস্থা। সুধীরবাবু একটা ফাঁকা বসার জায়গায় বসলেন। রেলের তারের ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আহা, কি দৃশ্য। অথচ একটু আগে এ সব কিছু তুচ্ছ ছিল। সুধীরবাবু এক কাপ কফি আর একটা চিকেন স্যাণ্ডুইচ নিয়ে বসলেন। বাড়িতে ফোন করে বললেন, আজ রাত হবে, অথবা হয় তো ফিরবেন না। সুধীরবাবুর মনে হল তিনি চাইলেই এক্ষুণি সন্ন্যাসী হয়ে যেতে পারেন। এক্ষুনি হিমালয়ের কোনো গুহায় বসে ধ্যানে ঈশ্বরলাভ করতে পারেন। ঈশ্বর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবেন, কি চাস সুধীর?
কি চাইবেন? কিচ্ছু না। যার পেট পরিষ্কার হয়েছে, তার সব হয়েছে। ভাবতে ভাবতেই পেটে একটা মোচড়। আবার! নাহ্, সব আবার ঘোলাটে। এক্ষুনি ফিরতে হবে। কিন্তু কিভাবে? প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষা করতে করতে সুরমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করলেন, একটু মৌরি ভিজিয়ে রেখো। পেটটা আবার…
সুরমা লিখল, কদ্দূর এবার? খড়গপুর না বর্ধমান?