আমার খুব কাছের এক বন্ধু তার জগন্নাথ দর্শনের গল্প বলছিল। আমি না হয় তার ভারসানেই লিখিঃ
"...তো কি হল, আমি তো হেঁটে হেঁটেই জগন্নাথ মন্দিরে গেলাম। আগেও অনেকবার গেছি, পথঘাট সব চেনা। মন্দিরে গিয়েই 'পখাল্ড়' নামে এক খুরি প্রসাদী পান্তাভাতের জল খেলাম। আহা! কি যে স্বাদ, কি বলি তোমায়। তারপর গর্ভমন্দিরে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভক্তিভরে ঠাকুর দর্শন করছি, এমন সময়, মাগো মা! সে কি একখানা মোচড়! ভাবলাম, নাহ্, আর তো দাঁড়ানো যাবে না! কি করি, কি করি! প্রায় এক দৌড়ে মন্দির থেকে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। সেকি ভিড়, সেকি ভিড়! কিন্তু আমার তো ছুটতেই হবে। প্রাণপণে ডাকছি, ঠাকুর কমিয়ে দাও, ঠাকুর কমিয়ে দাও.... রিকশা... এই রিকশা....
ওহ্... তারপর সেকি ঝাঁকুনি গো! রিকশা যত লাফায় আমি তত দাঁড়িয়ে পড়ি। আমি যত দাঁড়িয়ে পড়ি সে তত এগিয়ে আসে। সে যত এগিয়ে আসে আমি তত ঘেমেনেয়ে অস্থির হই। ঠাকুর আমার সিদ্ধাই চাই না, কাম অর্থ কিচ্ছুটি চাই না... তুমি একে থামাও ঠাকুর যে করেই হোক থামাও....
দাদা গো এমন প্রার্থনা... এমন সজল চোখে আন্তরিক প্রার্থনা বাপের জন্মে করেছি কিনা কে জানে.... ওদিকে রিকশাওয়ালার পায়ে যেন জন্মান্তরের আলস্য... ওরে টান ভাই... আরো জোরে... আমার হাতে যে সময় বড় কম.... আমার মানসম্মান সব কয়েক মুহূর্তের হিসাবে আটকে... কয়েকটা পেশির উপর আমার জীবন মরণ... একটু বেসামাল হলেই এই যুগান্তরের সভ্যতার বাঁধ ভাসিয়ে নিয়ে যাবে রে ভাই... সব যাবে, সব সব সব যাবে... আরো জোরে... আরো জোরে... মনে কত বিপ্লবীর মুখ আনছি... কত সাহসী বাণী স্মরণের চেষ্টা করছি... কতভাবে বিচার করছি আমি শুদ্ধ আত্মা... আমি এ দেহ নই... কিন্তু ভবি ভুলবার নয়... আমার মনের ব্রহ্মজ্ঞান হলে কি হবে শরীরের ব্রহ্মজ্ঞান ঘটায় কার সাধ্যি.... বলি হ্যাঁ রে, যে তোকে খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে এমন নাস্তানাবুদ করতে হয়! আমি না জীব! আমি না....
এসেছে!! এই নে পয়সা! ফেরৎ চাই না... তুই যা!
আমি হোটেলের সিঁড়ি বেয়ে উঠছি... ওই দেখা যায় আনন্দনিকেতন... আমার স্বর্গ... একটা ঘর... একটা শ্বেতশুভ্র স্থান... পাশে কল... তাতে জল... আহা! এই তো মোক্ষধাম! এই তো সব!
একি! দরজায় তালা! কেন? কোথায় সব! এই তো রিং হচ্ছে....
কোথায় তোমরা...???
এই তো বাবু আমরা সব বিচে আছি... আয় চলে আয়... তোর মেসো কি দারুণ খাজা এনেছে রে কাকাতুয়া থেকে আয় খেয়ে যা.... আয় আয়.... এক্ষুণি তোর কথা বলছিলাম....
আর শোনা যায়! হায় হায় বিধি...
তারপরের ঘটনা সোজা। হোটেলের রিসেপশানের পাশে নোংরা টয়লেট। যেদিন এ হোটেলে ঢুকেছিলাম.. সেদিন উপরে যাওয়ার আগে একবার ভেবেছিলাম ছোটোটা এখানে সেরে তারপর উঠি... তলপেটে প্রবল চাপ... কিন্তু ঢুকেই বেরিয়ে এসেছিলাম... মনে মনে বলেছিলাম, এত নোংরা! মানুষে যায়! আজ এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমার নয়নে আনন্দাশ্রু... আমার চিত্তে অহংনাশের সুখ... আমার গোবিন্দ আমায় এইখানে হাগিয়ে বুঝিয়ে দিল 'আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল...' ... এই ঝুল... এই কচি মাকড়সার দল... এই নোংরা মগ.... এই হরিদ্রাভ আধার..... সব সুন্দর... সব সব সব.... এই মুক্তি...."