গুরু বললেন, তুমি যখন বাড়ি থাকবে তোমাকে তখন গিয়ে দীক্ষা দিয়ে আসব।
শিষ্য আশ্চর্য হয়ে গেল। বলল, তবে তো ভীষণ ভালো হবে গুরুদেব। আমার বাড়িতে আপনার পায়ের ধুলো পড়বে।
গুরু হাসলেন। বললেন, কাল সকালে আসব।
পরেরদিন বিকেলে শিষ্য গেল আশ্রমে। গুরুদেব, আপনি এলেন না? আমি সারাটা সকাল অপেক্ষা করে বসেছিলাম। দোকান খুললাম না আজ।
গুরু বললেন, গিয়েছিলাম তো। তুমি দোকানে ছিলে। শরীর বাড়িতেই ছিল। আমি শরীরকে দীক্ষিত করি না। মনকে করি।
শিষ্য লজ্জা পেল। বলল, আর হবে না। আপনি আসুন। কাল সকালে?
গুরু বললেন, না, দুপুরে। তিনটের পর। ক্ষুধার্ত থেকো না। খেয়ে নিও। আমি আসব।
শিষ্য সন্ধ্যেবেলা গেল পরেরদিন আবার। গুরু আসেননি।
গুরু বললেন, গিয়েছিলাম। তুমি কয়েক বছর পিছিয়ে ছিলে। তোমার বাড়ির সামনের জমিটা তুমি তোমার দুর্দিনে বিক্রি করেছিলে। সেখানে চারতলা বাজার বসছে। তুমি সেই কেনাবেচার দিন দরদাম খতিয়ে দেখছিলে আবার, ঠকে গেছ কিনা।
শিষ্য সাশ্রুনয়নে বলল, ঠকেছি?
গুরু বললেন, রোজ ঠকছ, ঠকাচ্ছ।
শিষ্য বলল, কাল আসুন.. আমার স্বভাব নষ্ট.. আমায় ত্যাগ করবেন না….
গুরু বললেন, সন্ধ্যেবেলা।
শিষ্য অনেক রাতে গিয়ে পৌঁছাল আশ্রমে। গুরুদেব আসেননি।
গুরুদেব বললেন, গিয়েছিলাম। তুমি ব্যস্ত ছিলে আমায় নিয়ে। দীক্ষার পর তুমি যখন সিদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত হবে তখন কি কি করবে সেই নিয়ে আমার সঙ্গে শলাপরামর্শ করছিলে। তোমার মান হবে। টাকা হবে। তোমার নামে মন্দির হবে তুমি মারা গেলে। আমার আশ্রম সোনা দিয়ে মুড়ে দেবে তোমার ব্যবসায় লাভ হলে। এইসব আর কি। আমি ফিরে এলাম।
শিষ্য ফিরে এল।
বছর যায়। শিষ্য মনকে দেখে। তার গতিবিধি দেখে। আশ্চর্য হয়। অবাক হয়। নিজের দুঃখের কারণ সে নিজে। নিজের সুখের কারণও সে। বাসনা তাকে নাকে দড়ি দিয়ে রাতদিন ঘোরায়। এক দণ্ড শান্তি নেই তার। সে বাঁচল কখন? সে তো শুধু মনের দাসত্ব করেই কাটালো! চোখে জল এলো। সামনে সব কিছু হঠাৎ কি স্পষ্ট, স্বচ্ছ হয়ে যাচ্ছে। আলোয় আলো হয়ে যাচ্ছে। সে স্থির তাকিয়ে আছে। ক্রমশ সব হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু আলো আর আলো। সেই আলোর মধ্যে কে যেন এসে দাঁড়ালো। গুরুদেব!
সে বলল, আমায় মন্ত্র দিন!
গুরুদেব বললেন, এই তো মন্ত্র.. এই মনের যে দ্রষ্টা… তোর আমির যে স্রষ্টা… সেই এই এই এই… এই মুহূর্তেই… এই মন্ত্র… "এই মুহূর্ত.. সেই মুহূর্ত"।