নিজেকে ডিঙিয়ে বাইরে এসে লোকটা ভয় পেল? যে বাইরে এসে দাঁড়ালো আর যে ভিতরে ছিল - এরা কি দুটো আলাদা মানুষ? পাঁচিলটা কই? যেটা ডিঙিয়ে সে বাইরে এলো।
রোদের আলো যেন অনেক গভীর আলো। বাতাস যেন অনেক বেশি বাতাস। সব কিছু খুব স্পষ্ট। কিন্তু মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন - এবার? কি করবে সে? পাঁচিলের মধ্যে যখন ছিল তখন নানা কাজ ছিল, একদম বাঁধাধরা নিয়মমাফিক সব হয়ে যেত তখন। সেখানে সব ছিল তার অনুগামী। কিন্তু এখানে? কেউ তো কারো অনুগামী নয়? তবু সব চলছে কেমন ছন্দে, কি করে হয়? কে চালায়? তবে কি ঈশ্বরের খুব কাছাকাছি সে?
মনের মধ্যে আবার কেমন একটা ঘোর জন্মালো। আবার দেখল পাঁচিল উঠে গেছে কখন। ঈশ্বরের ছবিতে ভরা এ দেওয়াল, সে দেওয়াল। নানা তাদের রূপ। নানা তাদের বাণীর ভাষা। সব দেখে তার আবার কেমন লাগল। আনন্দ কই? আবার ডিঙাবে পাঁচিল? এই কি ঈশ্বর!
আবার ডিঙাতে শুরু করল পাঁচিল। তার গায়ের ঘষা খেয়ে এই ছবি, সেই ছবি মুছে যেতে শুরু করল। বাণীগুলো খসে খসে যেতে শুরু করল। যত ওঠে তত কারা যেন মাথা ঠুকরায়, কারা যেন শিকলের ছোবল দিয়ে যায়, কারা আগুনের ছ্যাঁক দিতে আসে। তবু এসবের মধ্যেও কে যেন পাঁচিলের ওদিকে ডাকে।
অবশেষে পাঁচিল টপকে গেল। আবার সব ধাঁ! কই কিচ্ছু তো কোথাও নেই। সব চলছে নিজের ছন্দে, নিজের মত করে। তবে সে এখন কি করবে? কি তার কাজ? একে তাকে জিজ্ঞাসা করে, কেউ উত্তর দেয় না। কেউ কেউ ভুরু কুঁচকে বলে কাজ? ধুস, সে আবার কি জিনিস? আমাদের তো সব খেলা। এই দেখো, আমরা যা হয়েছি, যা করে বেড়াচ্ছি সবই তো খেলা।
সে বলল, শুধুই খেলা? এ সবের কোনো মানে নেই?
একজন বলল, মানে? সেটা আবার কি শব্দ? মানে আবার কি? সব যা দেখছ, তাই দেখছ। যা শুনছ, তাই শুনছ।
তবে আমি কি করব?
একজন বলল, যা হয়েছ, সেই তো করা। ফুল যেমন ফুল হয়েই সব করেছে। পাখি যেমন পাখি হয়েই সব হয়েছে। নদী যেমন নদী হয়েই সবটুকু হয়েছে। তেমন তুমি, তুমি হয়েই তো সবটুকু হয়েছ। তাই নয় কি?
আর সে? সে নেই তবে?
একজন বলল, সেই তো সব, সব মানেই সে। সব হয়েছে বলেই সে। সে হয়েছে বলেই সব।
ডুবে যাওয়ার ভাবনা নেই। তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্তব্য নেই। একটা সুর ভেসে এলো। সুর তো না, ঢেউ ভাঙার শব্দ। বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর গর্জন শুনল। সিন্ধুতে ডুব দিল, বলল, আমিই সেই বিন্দু, আমিই সেই সিন্ধু। আমি হারিয়ে গেলাম। আমি খুঁজে পেলাম।