Skip to main content

এবার আমার কোথাও একটা ভয় করতে শুরু করছে। কোথাও পুরো ব্যাপারটা ধীরে ধীরে যেন একটা বিপজ্জনক খেলায় রূপ নিচ্ছে। আমি বর্তমান ধর্ম সংক্রান্ত চাপান-উতরের কথা বলছি। একপক্ষকে এবার থামতে হবে। প্রতিবাদী আর প্রোভোকেটিভ হওয়ার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে, সেটা যেন ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে বলে আমার আশংকা হচ্ছে। যদি আমার বুদ্ধি বেশি সুক্ষ্ম, সংযত হয় তবে নিশ্চই আমায় একটা জায়গায় এসে থেমে যেতে হবে। 
প্রতিবাদের পিছনের একটা মানবিক যন্ত্রণা থাকে, আঘাতপ্রাপ্ত অহং এর গর্জন নয় সেটা, যাকে ইংরাজীতে wounded ego বলি। আমার শিক্ষা, আমার রুচি, আমার আত্মসংযমের ক্ষমতা এমন অবশ্যই হওয়া উচিৎ যে আমার সেই ক্ষুব্ধ-অহংকে আমি নিজের বিবেচনা দিয়ে শান্ত করতে পারব। আমার ভাষার মধ্যে এমন একটা শুভ-বিশ্বাসের দিক থাকবে যা অকারণ ধুলো না উড়িয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছাবে। আমার গন্তব্য অবশ্য যদি হয় মানুষের বিবেক। মানুষের শুভ- চেতনা। মানুষের শুভ চেতনা জাগাতে খোঁচা লাগে না, উত্তেজক শব্দের ঝঙ্কার লাগে না, মোদ্দা কথা প্রোভোক করে শুধু হল্লাই হয়, কিন্তু চেতনার পরিবর্তন হয় না। অমুক যদি ৫০ ডেসিবেলে চেঁচায়, আমি ১০০তে চেঁচাবো...তমুক ১৫০ করলে আমি ২০০ করব...এভাবে হয় না। প্লিজ, একটু শান্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করি আমরা, এভাবে হয় না। আঘাতের পরে পাল্টা আঘাত হানতে থাকলে মহাত্মার ভাষায়, “ একটা চোখের বদলে আরেকটা চোখ উপড়াতে শুরু করলে একদিন পুরো দুনিয়া অন্ধ হয়ে যাবে"। 
আমি জ্ঞান দিচ্ছি না। আমার কোনো ক্ষমতা নেই, সে আমার থেকে আর ভালো কেউ জানে না। আর প্রতিবাদী কবিতা, প্রবন্ধ না প্লিজ। আমরা একটু শান্ত হই। শান্ত হওয়া মানে তো মেনে নেওয়া নয়! অবুঝ, নির্বোধের দল ভাবতে পারে, -'এ ব্যাটা চুপ করে গেল মানে হেরে গেল', আমি আমার অন্তঃস্থলে তো জানি যে আসলে তা নয়! বাইরের আলোড়ন অগভীর চিরটাকাল। আমার কলমে যদি শক্তি থাকে তবে তা উত্তেজনার হাতে তুলে দেব না, সংযত বেগের সাথে আঁচড় কাটব। আবারও বলি, আমার উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের শুভ চেতনা, যদি সত্যের উপর আমার আস্থা থাকে, শুভের উপর আস্থা থাকে তবে এত কথার দরকার নেই। আলো জ্বালার কাজটা নিঃশব্দে করি। দাবানল জ্বালিয়ে নয়। একটা মশাল জ্বেলে। একা হলেও। অন্ধকারের বুকের উপর উঠে 'অন্ধকার অন্ধকার' বলে চেঁচানোর কোনো দরকার নেই তো, ওতে শুধু হুজুগ হয়, মাঝারিদের চেতনায় একটা সাময়িক আলোড়ন হয়, তারপর যেই কে সেই। কারণ যে কোনো হুজুগের, উত্তেজনার প্রধান অসুবিধা হল, মানুষ সেই সময়টা চিন্তা করে না, আস্ফালন করে, অনুকরণ করে। আর যে যত জোরে হাত পা নাড়ে, তাকে তত বড় যোদ্ধা বলা হয়। এ অগভীর পথ অন্যদের জন্য থাক, যাদের কাছ থেকে এর থেকে বেশি আশা করা ধৃষ্টতা। 
আর রইল ধর্মের কথা। সে তো বরাবরই যুক্তির রাজ্য নয়। অন্তত বৃহদংশের ক্ষেত্রে। সেখানে কোনো কিছুই বিবেচনা-বিচার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না, আবারও বলি বৃহদংশের ক্ষেত্রে। সে সম্পূর্ণ আবেগ অনুভূতি নির্ভর। তাই সেখানে যে কোনো অপ্রিয় শব্দের প্রত্যাঘাত যুক্তিসম্মত আশা করাই তো অযৌক্তিক। আর আবেগ ফুঁসলে তা যে রূপ ধারণ করে তা ইতিহাস সাক্ষী। যাদের যুক্তির বোঝার বা ফেরাবার ক্ষমতা নেই তারা অপযুক্তি, ব্যক্তিগত আক্রমণ ইত্যাদি করবে এ তো অভিপ্রেত। তবে এত মান-অভিমান কেন? প্রতিবাদ নিশ্চয় করতে হবে অন্যায়ের, সে প্রতিবাদ করলে পাল্টা যে আক্রমণ আসবে তার প্রতিবাদ করতে শুরু করলে তো লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া হয়, তাই না? আমার শক্তি থাকলেই কি তার ব্যবহার করা মানায়? আমায় দেশ-কাল-পাত্র বিবেচনার দায়ভার নিতে হবে না? নিজের ক্ষুদ্র অহংকে(সে যত বড় সেলিব্রিটিই হই না আমি) জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুমাত্র অন্যায়টার প্রতিবাদ করে সরে আসা যায় না? 
তাই বলছিলাম, এবার আমরা একটু শান্ত হলে বোধহয় ভালো। গজল গাইতে শুনতে হবে, তাই বলছি না, যখন আগুন লেগেছে চারদিকে, পক্ষ-বিপক্ষ বিচার না করে আগে একটু জলের ব্যবস্থা করি ধীর মস্তিষ্কে। ব্যক্তিগত আক্রমণগুলো ভুলতে চেষ্টা করি। বড় হলে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়, বাড়ির বড়রা বলতেন। আর আমার মত যারা সাধারণ মানুষ দয়া করে আর ওইসব শেয়ার করবেন না প্লিজ। এবার একটু থামি আমরা।