রত্না এক হাতে আটা ভর্তি প্লাস্টিকটা নিয়ে, আরেক হাতে বাজারের ব্যাগটা… রাস্তার এ পাশে এসেই মনে পড়ল ও ফুটে আবার যেতেই হবে… চা পাতাটা আনা হয়নি।
দোকানে ভিড়। ব্যাগটা মাটিতে রেখে তার উপর আটার প্লাস্টিকটা বসালো। পায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। আবার ও ফুটে চোখ গেল, আরে পল্লবী না? তাদের পাশের বাড়ি থাকত। বিয়ে হয়ে গেছে। বাজারে কি করছে? কবে এলো? শ্বশুরবাড়ি বেশিদূর নয় যদিও….
রত্না আবার হাতে প্লাস্টিক ভর্তি আটাটা তুলে, ব্যাগটা আরেক হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ালো…. ভালো চাকরি করে পল্লবীর বর…. কিন্তু সঙ্গে ওটা কে? একটু দূরে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে… বিষ্ণুই তো…. শালা এখনো চক্কর চলছে এদের?
বিষ্ণুর সঙ্গে পল্লবীর সম্পর্ক ছিল। বাড়িতে মানেনি। বিষ্ণু চাকরি বাকরি কিছু করত না… এখনও করে না…. কিন্তু এখনও ওর সঙ্গে কি?
"দিদি কোথায় যাবেন?"
টোটো দাঁড়িয়েছে একটা। রুত্না বলল, না না… আপনি এগোন….
ব্যাগটা আবার মাটিতে রেখে, তার উপর আটার প্লাস্টিকটা রেখে বেঞ্চে বসল। নজর রাখতে হচ্ছে। নিষিদ্ধ সুখ।
চায়ের পয়সা দিল পল্লবী। রাস্তার পাশে সব্জীর দোকান। পেতে বসা দোকান। পল্লবী ঝুঁকে সব্জী বাছছে। তাই তো… একটু পটল আর ডাঁটা নিলে হত… পল্লবী লালশাক কিনল। বিষ্ণু পল্লবীর মেয়েটাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে। কি বেহায়া ছেলে রে বাবা!
"দিদি ওই পাতা চা-টাই দেব…. না শুধু সিটিসি?"
মাথা কাজ করছে না। কোনটা যেন ফুরিয়েছে? কাজের লোকের জন্য সিটিসি। বাড়ির লোকের জন্য পাতা চা। কিন্তু ফুরালো কোনটা?
আপনি দুটোই দিয়ে দিন। আমি একটু পরে নিচ্ছি ভাই… কোমরটা যা ধরেছে….
বলেই মনে মনে জিভ কাটল। ছি ছি! বাইরের লোকের সামনে এসব কোমর টোমর বলা একদম পছন্দ নয় রত্নার। মাথাটা কাজ করছে না। চায়ের দোকানি কি তার কোমরের কথা ভাবছে?
বিষ্ণু বাইকে উঠে কথা বলছে। নিশ্চয়ই কোনো বন্ধুর বাইক হবে। পল্লবীর হাত ধরছে। বাচ্চাটা বিস্কুট খাচ্ছে। বিষ্ণু চলে গেল। পল্লবী কাকে ফোন করছে।
====
ব্যাগ আর আটা নিয়ে রত্না হুড়মুড় করে এদিকে এলো। পল্লবী তাকে দেখেই জোরে জোরে হেঁটে রাস্তার ও ফুটে গিয়ে একটা চলন্ত টোটো থামিয়ে উঠে পড়ল। কি হল এটা? ভরা সন্ধ্যেতে বেলেল্লাপনা করতে পারো… আমি দুটো কথা বললেই… আর বিষ্ণুকে নিয়ে কোনো কথা বলার ইচ্ছাই ছিল না তার… বাচ্চাটাকে একটু আদর করত…..
পটলগুলো শুকনো। ডাঁটাগুলোতে কালো ছোপ ছোপ। শাক কিনল। লালশাক।
ব্যাগটা আর আটাটা নিয়ে হাঁটছে, হঠাৎ মনে পড়ল আবার তো ও ফুটে যেতে হবে…. ছোটো সোয়াবিনটা আনার কথা আজ…..
মুদির দোকানে সোয়াবিন দিতে বলে চারদিকে তাকাচ্ছে রত্না। বাড়ির গলিটার মুখে ছেলেগুলো জটলা করে দাঁড়িয়ে। সরু গলি। তার ভিতরে শিরা উপশিরার মত আরো সরু গলি। তার একটায় তার বাড়ি। দুটো ঘর। একটায় সে তার বর আর নাইনে পড়া মেয়ে। পাশের ঘরে শ্বশুর শাশুড়ি। সামনে একফালি বারান্দা। রান্নাঘর ওটাই। বাইরে উঠানে উল্টোদিকে পায়খানা বাথরুম। ছাদের উপর আরো তিনতলা বাড়ি। তার উপর ছাদ।
রত্না সোয়াবিন নিয়ে জোর করে চেপে ঢোকালো ব্যাগে। ও ফুটে আর তিরিশ পা এগোলেই তার গলির মুখ। দেখা যাচ্ছে। স্ট্রিট লাইটের আলোটা জ্বলছে। যে আলোটা বিয়ে করে আসার সময় ছিল হলুদ, এখন সাদা।
এ ফুটে আর কাজ নেই। ঘরে এখন গাঁক গাঁক করে টিভি চলছে। মেয়েটা পড়ছে ওরই মধ্যে। কেউ সাউণ্ড কমাবে না। না বাবা, না ঠাকুর্দা। শাশুড়ি ঘুমাচ্ছে। রাত এগারোটার আগে উঠবে না। সেও যদি না ফেরে?
রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। ও ফুটে যাবে। ফাঁকা টোটো এসে দাঁড়ালো, দিদি কোথায় যাবেন?
রত্না বলল, রামপ্রসাদ স্কুল গিয়ে ফিরে আসব…. কত নেবেন?
এত রাতে?
হ্যাঁ… কত নেবেন?
একশো…..
চলো….
বুকের ভিতর ধড়াস ধড়াস করছে…. কেন যাচ্ছে… তার ছোটোবেলার স্কুল…. মাঠ…. কি হবে গিয়ে?...
টোটো চলছে…. তার বাড়ির গলি পেরিয়ে যাচ্ছে….. পেরিয়ে যাচ্ছে….
দাঁড়াও….
কি হল দিদি?
যাব না….. কত দেব?
টোটোওয়ালা মুখের দিকে তাকিয়ে….
একটা দশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিল। সেও নিয়ে নিল।
গলির মুখে ছেলেদের জটলা। ওপারে দেশি মদের দোকান। একটু পর তার বর আসবে। গিলবে। রাতে মেয়ে জেগে থাকবে ঘুমের ভান করে…. তারই মধ্যে… দুটো উরুর ফাঁকে…. যমযন্ত্রণা…. রোজ রোজ রোজ… একই…. যা শুরুর আগেই শেষ হয়ে থাকে তাকে শুরু করে কি সুখ পায়?
টোটোওয়ালা এখনও দাঁড়িয়ে? নাকি অন্য টোটো…. যাবে?