একটা চেয়ার নিজেকে বলত টেবিল। টেবিলের পাশে তাকে রাখলেই সে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠত। আর একা হলেই সে নিজেকে বলতে শুরু করত - আমি টেবিল... আমি টেবিল... আমি টেবিল।
ক্রমশঃ সে একা হতে শুরু করল। নিজের থেকে দূরে সরতে শুরু করল। সবাই যেন তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কেউ যেন তার সঠিক মূল্য তাকে দেয় না। সবাইকে সে অবিশ্বাস করে। কেন যেন নিজের কথা-ভাবনাগুলোকেও অবিশ্বাস করে।
আসলে তো সে টেবিল, কেউ কেন বোঝে না এটা? নিজের মধ্যে যেন দু'খানা ঘর। এক ঘরে সে টেবিল। আরেক ঘরে সে চেয়ার। চেয়ারের ঘরখানা যেন বড্ড বড়। কেন বড়? সেটা যেন সরতেই চায় না। কেন চায় না?
চেয়ারটা হাতলগুলো ছড়িয়ে অলসভাবে বসে থাকে বারান্দায়। কেউ তার উপর বসতে গেলেই সে কঁকিয়ে ওঠে, কখনও রেগে, কখনও অভিমান করে, কখনও অনুনয় করে বলে, ওঠো ওঠো, আমি যে টেবিল।
এখন সে সম্পূর্ণ একা। ঘুণ ধরেছে পায়াতে, হাতলে। কেউ বসলেই হয় ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ। তবে এখন সে চুপ করে থাকে। তার ভিতরে দুটো ঘর। এখন যেন সে কোনো ঘরেই নেই। দুটো ঘরের মাঝখানে চৌকাঠে দাঁড়িয়ে। টেবিলের ঘরে যাওয়ার অভ্যাস, লোভ। কিন্তু কেন যেন সে চেয়ারের ঘরের দিকেই যেতে চায়। কিসের একটা শান্তি যেন ওদিকে। কিন্তু শান্তিকেও সে বিশ্বাস করতে পারে না। তবু যেন জানে মরবেও ও'ঘরেই। মরার পরে চেয়ারই হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সব কি তবে বৃথাই হল?