Skip to main content

রাজীব বলল, ভন্তে, অজ্ঞান অনাদি। নির্বাণ সেই অজ্ঞানকে জানা বই তো নয়। সমস্ত সৃষ্টি অজ্ঞানে ডুবে। পরক্ষণে কী হবে জানে না। হাতড়ে হাতড়ে বাঁচা।

সুকুমার বলল, সব বিনাশশীল। পঞ্চস্কন্ধই বিনাশশীল। রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার, চেতনা সব বিনাশশীল। তোমার জানা অজানা সব বিনাশশীল।

রাজীব চুপ করে দীঘির জলে ডুবন্ত সূর্যের ছবি দেখছে। এই ছবি, এই ঢেউ, এই বাতাস, এই তার দেখা, এই দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার যে অনুভব, সে অনুভবে তার যে উপলব্ধি, সে উপলব্ধিকে জানছে যে চেতনা…. সব একটু পর বদলে যাবে। পরিবর্তনশীল সব। সুকুমার ঠিক বলেছেন। সুকুমার বরিষ্ঠ সন্ন্যাসী। এই মঠে তারা দুজনেই এখন। গরীব মঠ। কোনোভাবে চলে। কিন্তু রাজীবের ক্ষোভ সে নিয়ে নয়। সন্ন্যাসের রাস্তায় এসেছে যেদিন সেদিন থেকেই ওসব নিয়ে ভাবে না।

সুকুমার চোখ বন্ধ করে বসে আছে। রাজীব দূরে তাকালো। এদিকে বাড়িঘর নেই তেমন। সামনে একটা বড় জঙ্গল। ওটা পার করে গেলে রেললাইন। সব বিনাশশীল। পরিবর্তনশীল। বস্তু বস্তুকে জানা দুই-ই সরে সরে যাচ্ছে।

রাজীব বলল, ভন্তে, আপনি শান্তি পেয়েছেন?

সুকুমার চোখ মেলে তাকালো সামনের আলো আঁধার মেশা মাঠের দিকে। শান্তি কী পাওয়ার জিনিস? অশান্তি দ্বন্দ্ব থাকলেই থাকবে। পরিবর্তনশীল জগতে কাকে ধরে রাখা যায়? কে পেরেছে কাকে ধরে রাখতে? ধরে রাখতে চাইতেই যত দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্ব মানেই অশান্তি।

সুকুমার বলল, অশান্তির জড় নষ্ট হয়েছে। আমার আসব ক্ষয় হয়েছে ভন্তে।

রাজীব বলল, আসব?

সুকুমার বলল, ঝোঁক। জীবনে কোনো একটা দিকে ঝোঁক থাকলে দ্বন্দ্ব জন্মায়। ঝোঁক ঝেড়ে ফেল। উঠে দাঁড়াও। একা হও।

রাজীব দেখল চারদিক দেখতে দেখতে অন্ধকার হয়ে গেল। বলল, একা হতে ভয় করে ভন্তে।

সুকুমার হাসল। বলল, একদিন ভয় করবে না ভন্তে। ভয় পঞ্চস্কন্ধের একটা স্তর। মূল ভেঙে যাবে যেদিন, ভয়ও ভেঙে যাবে।

কী থাকবে সেদিন ভন্তে? রাজীব বলল।

সুকুমার বলল, শূন্য। যা জ্ঞানও না। অজ্ঞানও না।