Skip to main content

প্রথম সমস্যা হল 'দু চক্ষে দেখতে পারি না', আর সহমত নই - এই দুটোর মধ্যে একটা সুক্ষ্ম পার্থক্যকে ধরতে না পারা। সেটা শিক্ষাগত পার্থক্য। যখন আমি তেড়ে ফুঁড়ে বলছি, আমি ওকে দু চক্ষে দেখতে পারি না… ও আমার দু চক্ষের বিষ….. এ অন্ধ আবেগের মাতালপনা। কিন্তু যখন আমি বলছি আমি অমুকের সঙ্গে সহমত নই, কিম্বা আমি ওঁর অনেক সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি না, তখন সেটা আমার বিবেচনাপ্রসূত অবস্থান।

দ্বিতীয় সমস্যা হল, আমার সামনে একটা সত্য, বাস্তব বলে জিনিস আছে। কিন্তু তা ছেড়ে আমি যখন কোনো অলীক সত্য-সম্ভাব্যতার দিকে ঝুঁকছি, তখন বুঝতে হবে আমি ততটা সত্যকে খুঁজছি না, যতটা নিজের মনের মত একটা সিদ্ধান্তকে খুঁজছি।

এই দুটোই আমাদের ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন আর রাজনৈতিক জীবনকে আশ্চর্যজনকভাবে গ্রাস করছে দিনে দিনে।

"আমি দু-চক্ষে দেখতে পারি না" আমার মানসিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে। আর বাস্তবকে ছেড়ে পুরাণ থেকে শুরু করে নানাবিধ কাল্পনিক ইতিহাস, বিজ্ঞানে আমরা নাকি যুগান্তকারী সত্যের অন্বেষণ করতে লেগেছি। কেউ কেউ আবার পেয়েও যাচ্ছেন শুনছি।

প্রথমটা আমাদের অনুভবী সত্তাকে সঙ্কীর্ণ, বায়াসড, বিগট করে তুলছে। আর দ্বিতীয়টা আমাদের ফ্যানাটিক, অর্থোডক্স, ইডিওসিনক্র‍্যাটিক করে তুলছে নঞর্থে।

এতে করে হেলদোল প্রচুর হচ্ছে, সাঁকো নড়ছে চড়ছেও। তাতে এক পক্ষের মানুষ ভাবছে তবে কিছু একটা হচ্ছে। আরেক পক্ষের মানুষ সন্দিহান হয়ে উত্তর খুঁজছে। আরেকদল একে তাকে দায়ী করে 'নেপোয় মারে দই' খেলায় নেমে পড়ছে।

কিন্তু আদতে কথাটা আমাদের নিয়েই। আমাদের হাতে অসীম ক্ষমতা। আমাদের চিন্তাশক্তির অসীম ক্ষমতা। আমাদের সত্য অর্থে শিক্ষিত হতে পারার মধ্যে অসীম ক্ষমতা। এটা না বুঝলে মুশকিল। তার প্রথম শব্দই রিজিনবল হতে শিক্ষা পাওয়া। অন্ধ নেগেটিভ আবেগের হাতে চিন্তার রাশ ছেড়ে না দিয়ে বোধবুদ্ধির হাতে রাশ তুলে দেওয়া।

সমস্যা হল আবেগ যে দ্রুততায় কাজ করে বোধবুদ্ধি ততটা দ্রুত নয়। তাই ধৈর্য প্রথম শিক্ষা। দুই, আবেগের দ্বারা নিয়মিত চিন্তা যে অনায়াসে আকাশে রাজপ্রাসাদ বানাতে পারে, কাণ্ডজ্ঞান দ্বারা চালিত ভাবনা তা পারে না, তা-ই তার আবেদনকে প্রাথমিকভাবে দুর্বলের আবেদন মনে হবেই। যতক্ষণ না বেলুনের হাওয়া শেষ হচ্ছে আর ভূলুণ্ঠিত হচ্ছি।

এই সময়ে দাঁড়িয়ে, এই দুটো সমস্যাকে স্পষ্ট করে বোঝা আমার মনে হয় খুব দরকার। চিন্তা-বিচারের বৈচিত্র্য থাকবেই। ভিন্নতা থাকবেই। কিন্তু তার সঙ্গে বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের সহাবস্থান সম্ভব। "আমি ওকে দু চক্ষে দেখতে পারি না" টাইপের মানসিকতা নয়।

দুই, যা বাস্তব, যা সত্য, তাকে স্বীকার না করে, এদিক ওদিক নাক ঘুরিয়ে সত্য-সম্ভবনাময় জগতের পিছনে না ঘুরে, প্রকৃত অর্থে সত্যের অন্বেষণই শুভময়, না তো নিজের অভিরুচি অনুযায়ী একটা খোঁজকে(?), গবেষণা বলে চালিয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। সত্যের অন্বেষণ মানে সত্যের অন্বেষণ, নিজের অভিরুচির সমর্থন অন্বেষণ নয়।

এ সবের থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার একমাত্র উপায় শিক্ষা। শিক্ষার সঠিক অর্থ সঠিক মানসিক গঠন। যা যে কোনো অর্থে সঠিক শিক্ষা দেবেই। যেমন পুষ্টিকর খাদ্য সুস্থ শরীর গঠন করবেই। সঠিক শিক্ষা চিন্তা আর আবেগকে বলশালী করে, গঠনমূলক করে। মোহমুক্ত করে। যেটা আশু দরকার আমাদের। মোহের সুখময় প্রতিশ্রুতির চাইতে, মোহভঙ্গের তীব্র জ্বালা আমাদের পক্ষে বেশি মঙ্গলময়। চিরকালের জন্য।