দুঃখ থেকে ত্রাণ পাওয়ার জন্য কত উপায় মানুষটা করল। কোনোটা কাজে এলো না। তারপর দুঃখ পেতে পেতে একদিন যখন তার দুঃখের ভয়টা চলে গেল, তার মনে হল যেন কদ্দিনের না কাচা কম্বল তার গা থেকে খসে গেল। তখন তার নিজের আগেকার চেষ্টাগুলো মনে পড়ে হাসি পেল, নিজেকে কত নির্বোধ মনে হল। সে খুব হাসল ক'দিন ধরে। লাগাতার হাসল।
তারপর নদীর ধারে, সব চাইতে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকা যে পাথরটা, তার উপর গিয়ে বসল। তার পায়ের নীচ দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে, মাথার উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে যাচ্ছে, তার পিছনে জঙ্গল থেকে নানা ফুলের গন্ধ আসছে। সে সব দেখে আর হাত তুলে বলে, আরে বাহ্, কেয়া বাত... কি দারুণ, দারুণ।
সবাই যারা নদীর ধারে আসে, কেউ নাইতে, কেউ কাপড় কাচতে, কেউ ওপারে যেতে, তারা বলে আরে ও পাথরটা থেকে নেমে এসো, ওটা যে কোনো মুহূর্তে জলে পড়ে যাবে, তুমি তলিয়ে যাবে নদীতে।
সে হাসে। বলে, আরে ভাই, এটাই তো ভয়, যে কোনো মুহূর্তে তলিয়ে যাওয়ার। যাবে যাক।
এই বলে সে আবার বিভোর হয় আনন্দে।
একদিন এক যুবক সন্ন্যাসী এলো তার কাছে। তখন অনেক রাত। সদ্য পূর্ণিমা গেছে। তাও চাঁদের গায়ে টোল পড়েনি এখনও। সে এসে একটু দূর থেকে বলল, তুমি কি মন্ত্র সাধনা করে এই অবস্থায় এলে গো?
লোকটা বলল, কোনো মন্ত্র নয় তো, এমনি এমনিই।
সন্ন্যাসী বলল, তোমার গুরুর নিশ্চিয় বারণ আছে বলার। তাই বলছ না, তাই না?
সে বলল, ধুর পাগল, আমার আবার গুরুকে? আমিই তো আমার গুরু।
সন্ন্যাসী বলল, তবে? তোমার মধ্যে এত আনন্দ এলো কি করে?
সে বলল, তোমারও হবে। দুঃখ পাওয়ার ভয়টা কেটে গেলেই আনন্দের ফোয়ারা খুলে যাবে।
সন্ন্যাসী বলল, কবে হবে আমার? কি করে হবে?
লোকটা বলল, প্রচুর দুঃখ পেতে পেতে হবে। ব্যস, এই হল সাধন।
সন্ন্যাসী বিমর্ষ হয়ে চলে গেল। লোকটা পাথরে শুয়ে পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, জ্বল, জ্বল। নিভিসনি। নিভলেই সব আঁধার।