Skip to main content
দ্রোহাত্মা ও মহাত্মা

(আজ ৩০ শে জানুয়ারী। মহাত্মাজীর এই ঘটনাটা আমি সুচেতা কৃপালীনি, মধু দণ্ডবতে প্রমুখ ব্যক্তিত্বের স্মৃতিচারণে পড়েছি। ঘটনাটিকে অবিকৃত রেখে তাকে কাব্যরূপ দানের প্রয়াস করেছি। ভাষাটি সাধু রাখলাম। বিষয়টি রূপদানে তা সহজে আসল।)

 

নোয়াখালি গ্রাম
বসিয়াছেন মহাত্মা প্রার্থনাসভায়
চারিদিকে হিন্দু মুসলিম আবালবৃদ্ধবনিতা
           বসি ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত আসনে
মহাত্মা বলিলেন, ক্ষীণ ধীর কণ্ঠে –
   একে অন্যের রক্তে না রাঙায়ো হাত
পূণ্য করো জীবন, আপন ধর্মে থাকি স্থির
           অন্য ধর্মের প্রতি থাকো শ্রদ্ধাশীল

পাখি উঠিল গাহি আসন্ন সন্ধ্যার বন্দনায় তরুশাখ’পরে
মহাত্মা বলিলেন, গাও প্রভুর জয়গান জুড়ি দুই কর, মোদো আঁখি
জ্বলুক অন্তরের আলোক অজ্ঞান তিমির নাশি

প্রার্থনাসভা হল মুখরিত সান্ধ্য বন্দনাগানে

ইত্যবসরে ধর্মোন্মত্ত মুসলিম এক এল ধেয়ে মহাত্মা সমীপে
চকিতে মহাত্মার কণ্ঠ আপন বজ্রমুষ্ঠিতে ধরিল চাপি
    ভুতলে পড়িল মহাত্মা সভাবেদী হতে, তীব্র শ্বাসরোধে

নাশিব প্রাণ তোর, রে দুরাত্মা! পাঠাব খোদার কাছে বিচারের লাগি
    গরজি উঠিল সে দ্রোহাত্মা, মহাত্মারে আপন ক্রোধমুষ্ঠে রাখি

মহাত্মার কণ্ঠ হতে উচ্চারিত হল কোরাণের প্রেম-শান্তিবাণী

বিস্ফারিত নেত্রে চমকিয়ে দ্রোহাত্মা বলিল, কে শিখালো এ বাণী তোরে?

মহাত্মা বলিলেন শান্তস্বরে,
যে আল্লাহ্ সর্বজীব হৃদিবাসী, যে রাম সেই রহিম
           সেই শিখালো মোরে

ভুতলে পড়িল দ্রোহী জুড়ি দুই করে,
   তবে যে বলিল ওরা, তুমি কাফের! না মানো আল্লাহরে

হাসিলেন মহাত্মা স্মিতহাস্যে,
    করি করূণ নয়নসম্পাত তার মুখপানে

কহিল দ্রোহাত্মা -
তবে রাখো মোরে আপন সেবায় প্রভু
   দাও পদে স্থান, সেবি তোমারে
নহিলে না মিলে ক্ষমা,
    করেছি চরম গুণাহ্ রাখিতে ধর্মেরে

কহিলেন মহাত্মা, যাও নিজ গ্রামে, প্রচারিও ভ্রাতৃত্ববাণী
   মিলাও দ্বন্দ্বরত দুই সম্প্রদায়ে

তাই হইবে প্রভু, বলিল সে নতমস্তকে

মহাত্মা কহিলেন ধরি তার দুই কর,
    আরেকটি অনুরোধ আছে, রাখো যদি ফিরি শান্তিনির্ভর

কহিল সে দ্রবীভূত প্রাণ, কি অনুরোধ প্রভু?

কহিলেন মহাত্মা, যা ঘটিয়াছে এখানে,
কিছুমাত্র না কহিবে ফিরি গিয়া গ্রামে
বাধিবে ভীষণ গোল, তব প্রাণসংশয় দেখা দিতে পারে
   সহিতে নারিব তাহা,
কহিলেন মহাত্মা সজল নয়নে,
    ভুলিয়ো আমারে ও ভুলিও নিজেরে

ফুকারি কাঁদিয়া ওঠে সে আনত অনুতপ্ত প্রাণ-
   কে তুমি প্রভু, এত ভালোবাসো তারে
       যে ক্ষণিক পূর্বে ছিল উদ্যত তব প্রাণ নাশিবারে!

 

(ছবিঃ সুমন)

Category