Skip to main content

চোখে যে ব্যামোর জন্য মাসখানেক পড়াশোনা, লেখালেখি সব কিছু থেকে বিরত ছিলুম তার নাম spk. কর্ণিয়ার উপরসা সংক্রমণ। সারাক্ষণ চোখ লাল, কড়কড়, জল কাটা, দৃষ্টি ঝাপসা ইত্যাদি। খানিক বড় ধরণের 'জয় বাংলা' বলতে পারা যায়। কিন্তু কথা অন্য জায়গায়। সেই লিখতেই বসা।
       আমায় অনেকবার অনেকেই বললেন, তবে তো আপনার খুব অসুবিধা, কারণ আপনার যে শুধুই চোখের কাজ।
       কথাটা শুনে খটকা লাগত। চোখে ড্রপ দিয়ে খাটের উপর পা তুলে চোখ বন্ধ করে ভাবতে বসতুম - আচ্ছা যে মানুষটা আমাদের বাড়ির ড্রেন পরিষ্কার করেন, যে দিদি রান্না করেন, যিনি ঘর মুছতে বাসন মাজতে আসেন - এনারা কেউই কি চোখ বন্ধ রেখে তাদের কাজটি চালাতে পারবেন? না তো। যিনি রিকশা চালাচ্ছেন, কি টোটো, কি ট্রেন চালাচ্ছেন, কি প্লেন - কেউ কি পারবেন? যিনি মুদির দোকানে মাল ওজন করে দিচ্ছেন? যিনি ট্রাফিক সামলাচ্ছেন? কেউই পারবেন না। তবে আমিই আর বিশেষ ভাবে উল্লিখিত কেন?
       আমার বরং অডিও বুক আছে, মাথাভর্তি কেজো-অকেজো ভাবনার জগত আছে, ছাত্রছাত্রী এলে পাঠ বুঝানোর জন্য স্মৃতির ভাণ্ডার আছে - কাজ মোটামুটি ঠেলে গুঁতিয়ে চালিয়েই নেওয়া যায়। চললও তাই। কিন্তু ওই 'বিশেষ' হয়ে ওঠার হাতছানিটা বড় সাংঘাতিক। আমি লেখাপড়া নিয়ে জীবনের অনেকটা সময় কাটাই বলেই যে আমার চোখ একজন মুচির চাইতে উন্নত, এইখানেই বড় গোল হয়ে যায়। নিজেকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা বেশ কথা। কিন্তু নিজেকে গ্যাস বেলুন বানানোটা মোটেই কাজের কথা নয়। ফেটে পড়ে মরার আশঙ্কার তো আছেই, সাথে হাওয়ার সাথে তাল রেখে ভেসে চলার বাধ্যতাও আছে। কি দরকার বাপু বিশেষ হয়ে? আজ কেমন দেখলুম ফেসবুকে, অমন ধারার কবি কি বিকট একটা স্লোগানে মঞ্চে উঠে ধুয়ো ধরছেন! বলি হ্যাঁ গা, কবির শব্দভাণ্ডার কি মঞ্চের দাক্ষিণ্যে বাঁচে? সে কথা থাক। কথা হচ্ছিল চোখ নিয়ে, তা বাপু চোখ বন্ধ করে ঠোঁটের উপর ঠোঁট ডুবিয়ে চুমু খাওয়ার সুখ আছে মানি, কিন্তু হাতড়ে সে ঠোঁটের নাগাল পাওয়ার অসহায়তাটুকুও আজ জানি।
       এক সময় মনে হয়েছিল ব্রেল শিখলে কেমন হয়? প্রথম মাথায় এসেছিল গীতবিতানের কথা। ব্রেলে আছে তো? গানগুলো হারিয়ে যায় যদি মাথা থেকে?
       এ সাময়িক অসুস্থতা আভাসে বুঝিয়ে দিল দৃষ্টিহীনতার অসহায়তার কথা। তবে এও উপলব্ধি করিয়ে দিল ভালোবাসার চাইতে বড় দৃষ্টিশক্তি সংসারে আর দুটি নেই। আমি অনেকবার দেখেছি অন্ধ দম্পতি একে অন্যকে ধরে রাস্তায় হাঁটছেন। আজ বুঝি সে জোড়ের বাঁধন শক্তি কোথায়। কয়েকদিনের অস্পষ্টতা এমন স্পষ্টতা নিয়ে ফিরে এল যে সে কদিনের অসুবিধার কাছে ঋণী হয়ে থাকলাম, তমসো মা জ্যোতির্গময়...আলোর অভাবে তবু মানুষ বাঁচে, ভালোবাসার অভাবে বাঁচেও না, মরেও না... শুধুই থাকে.... কি ভয়ংকর সে থাকা....