দরিদ্র রমণী এক, পুত্র সন্তান ক্রোড়ে, আসিলেন জঙ্গলে। রন্ধন উপযোগী শুষ্ক কাষ্ঠ সংগ্রহের তরে।
পুত্রেরে রাখিয়া ভূমে, কহিলেন স্নেহে, এই স্থানে করো ক্রীড়া, যাইয়ো না দূরে। আমি যাই জঙ্গল গভীরে, কাঠ আনিবার আছে, রাঁধিবার তরে।
ধ্যানমগ্ন তথাগত আছিল ধ্যানাসনে, কিঞ্চিৎ আড়ালে। দীর্ঘকাল খেলিতে খেলিতে, জননীর আসার পথ হেরিতে হেরিতে, দেখিল বুদ্ধেরে।
বুদ্ধের কাছে আসি, ক্ষুদ্র অসহায় দুই হস্ত প্রসারি কহে, ওগো, তব ক্রোড়ে দিবে কি ঘুমাবারে? বড্ড পাইছে ঘুম, মা আসি লয়ে যাবে ঘরে?
হাসিয়া বুদ্ধ তারে বলিল সস্নেহে, আসহ বৎস, পড়হ ঘুমায়ে, আমি আছি জাগি, মা আসিলে তব, দিব জাগাইয়ে।
খানিক সময় পরে, মা আসি, দেখি আপন সন্তান ঘুমন্ত বুদ্ধ ক্রোড়ে, লজ্জিত হইয়া পড়ে ভূমি পরে লুটে। দুই হস্ত জোড় করি, ভাসি অশ্রু নীরে, কহে অপরাধ না লইও নাথ, ক্ষমো ক্ষমো এ অবোধ পুত্রেরে। তব মহিমা না জানি, যে অপরাধ ঘটায়েছে, আমি ক্ষমা মাগি। ক্ষমা করো নাথ, করো দয়া অভাগা বিধবারে।
বুদ্ধ হাসিয়া কহে, বৃথা পাও ভয়, যাও লইয়া পুত্র তব, মম আশীর্বাদ জেনো গো নিশ্চয়।
বহু বৎসর গেল। মৃত্যু শয্যায় সে মাতা। শিয়রে বসিয়া পুত্র, কাতর হইয়া কহে, মাতা, কি তব শেষ আজ্ঞা?
ক্লেশবহ শ্বাস টানি, ক্ষীণ কণ্ঠে কহে মাতা, এক সাধ মনে, শিশুকালে যেমতি মস্তক রাখি ঘুমায়েছিলি বুদ্ধক্রোড়ে, প্রাণবায়ু রাখি সেই যোগে।
চমকি পুত্র কহে, তথাগত সম্বরি মানবলীলা, ত্যাজিয়াছে ভবে। কিমতে আনিব তারে? মাগো, অন্য কিছু কহো, এ দীন পুত্র দ্বারা যাহা সম্ভবে।
হেনকালে দ্বারে আসি দাঁড়ালো বৌদ্ধভিক্ষু ভিক্ষা লভিবারে।
পুত্র কহে, ওহে ভিক্ষু, দয়া করি আসিও অন্য সময়ে, মাতা মোর অন্তিম শয়নে, অধিক সময় নাহি, পরম ক্ষণ আসিছে ঘনায়ে।
ভিক্ষু কহে, ভিক্ষা এই, মাতারে লইতে আসিয়াছি, প্রভু আজ্ঞা দিয়াছে ধ্যানের গভীরে। যদি আজ্ঞা দাও, আপন ক্রোড়ে রাখি ওর মাথা, স্মরণ করি প্রভুর করুণ চরণেরে।
উঠিল স্তবগান দরিদ্র কুটিরে। পুত্র জুড়ি দুই কর, মাটিতে মস্তক রাখি, কহিল, ওগো প্রভু, এ দীনদরিদ্রেরে রাখিয়াছো মনে, যেমতি রবিরশ্মি স্পর্শে দীনহীন তৃণেরে, না করে অবজ্ঞা। ওগো প্রভু, করো দয়া এই, তব দয়া হতে যেন বঞ্চিত না হই।