বুড়োটার বুড়িটা মরল। তারপর থেকে ঘর অন্ধকার করে বুড়োটা শুয়ে থাকে। গোটা জগতের সঙ্গে তার আড়ি। সব সুখই তো অসুখ।
একদিন তার মেয়ে এল। নাতিকে নিয়ে। বলল, জামাই তোমার অমানুষ! আর না। মা ছিল, আসতে পারছিলাম না। এই একটা ঘর! কে কোথায় শোবে! তার উপর আমার এই দুরন্ত বাচ্চা!
বাবা বলল, আচ্ছা।
মেয়ে মাস তিনেক কাটাল। বলল, এ যে শ্মশানের মত শান্ত। আমি বরং একফালি উঠানে ভাজি চপ। আর ভাজি মুড়ি।
বাবা বলল, কী পাকা বুদ্ধি! যেন বুড়ি!
হল চপের দোকান। আর সঙ্গে মুড়ি। দেখতে দেখতে খদ্দের হল মেলা। বালবের পাওয়ার গেল বেড়ে। পাখা হল দুটো। ঘরদোরে ঝুলের দেখা ভার।
বুড়ো ভাবে শুয়ে শুয়ে, এ ঘরদোর কার?
বুড়োর এখন ঘুম আসে কম। তার বুকে ঘড়ঘড়ে কাশির সঙ্গে কষ্ট। তার একটা অভাব আছে, শূন্য হাঁড়ির বুকের মত অভাব, তার বুড়িটার অভাব! কীভাবে ছিল সে এতদিন? নাকি তারও যে অভাব থাকতে পারে এ বিশ্বাসও হারিয়েছিল অন্ধকারে, চিরদিন!
মা, তোর মায়ের একটা ছবি ছিল না? দুর্গাপুজোয় তোলা?
মেয়ে বলল, ওই তো মা কালীর পাশে… দেখোনি এতদিন… সিঁদুর দিয়েছি আজ… আজ যে বেস্পতিবার!
বাবা নাতিকে কোলে তুলে, তার জামাতে চোখ মুছে, বলল লাজমুখে, কী যে তোর কারবার!