লোকটা একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলবে বলে একটা বড় শ্বাস নিল। বুকটা এত্তবড় হয়ে গেল যে পাঁজরে আওয়াজ হল কট-কট-কট্টাস করে। ফুসফুসটা এত্তবড় হাঁ করল যে তার আলজিভ পর্যন্ত গীর্জার ঘন্টার মত দুলে উঠল। ট্রাকিয়া, ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওল, অ্যালভিওলাই জুড়ে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। এত্ত জোরে বাতাস ঢুকছিল যে কয়েক যুগ অত বাতাস নেয়নি লোকটা। প্রতিটা কোষ নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল - আঃ কি আরাম! কি ব্যথা! ট্রাকিয়াল রিংগুলোতে চড়চড় আওয়াজ হল।
যা হোক, বাতাস ঢুকে রক্ত বেয়ে সারা শরীর ছেয়ে গেল। মাথায় দেখল কালো কালো ঝুল। হৃৎযন্ত্রের আশেপাশে শ্যাওলা। পেটের মধ্যে টোপলা টোপলা কত কি রাখা। তার বেশি সময় নেই হাতে, এখনি একটা টাইফুনের মত দীর্ঘশ্বাস বানাতে হবে। কিন্তু তার পঞ্চাশ হাতেও এত ঝুল, এত শ্যাওলা, এত টোপলা ধরল না। সে মস্তিষ্ককে বলল, আরেকটু সময় দাও, আর কয়েকটা নিয়ে নিই। কিন্তু ডায়াফ্রাম চাপ দিচ্ছে উপরে উঠে আসবে, পাঁজরের মধ্যের পেশীগুলো চাড়াচ্ছে, ওরা নামবে এবার। পেটের পেশীগুলোও দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে শক্ত হয়ে আছে - আর কতক্ষণ!
অবশেষে দীর্ঘশ্বাস বেরোলো। দী-র্-ঘ হয়েই বেরোলো। বাঁশির আওয়াজের মত শোনালো। বাতাসে এসে মিশল ঝুল-শ্যাওলা-টোপলা। লোকটা ঘুমিয়ে পড়ল। তার খুব হালকা লাগছে। তার স্বপ্নের মধ্যে সে মাথার দরজা দিয়ে সময়ের বাগানে এলো। আকাশে দেখল ঝুলের মত মেঘ। নদীর পাড়ে এত্ত এত্ত শ্যাওলা। গাছের ডালে ডালে এত্ত এত্ত টোপলা। তার সব কিছু খুব চেনা চেনা লাগল। কিন্তু স্পষ্ট মনে করতে পারল না।
হঠাৎ ঝড় উঠল। সাঁই সাঁই করে বাতাস বইতে শুরু করল। ঝড়ের বেগে মেঘ-শ্যাওলা-টোপলা সব উড়ে উড়ে আকাশে চরকির মত ঘুরতে লাগল। ক্রমশ তার বোধ হল সেও যেন উড়ছে। সে সত্যি সত্যি মাটি ছাড়িয়ে উড়ছে। তালগাছের মাথাও ছাড়িয়ে গেল। নীচে সব এই ছোটো ছোটো। আরেকটা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার সময় হয়ে গেছে। পাহাড়, জঙ্গল, নদী, সমুদ্র বলছে - আঃ কি ব্যথা! কি আরাম!
সৌরভ ভট্টাচার্য
17 May 2018