Skip to main content

           জন্মদিন কবে?

জানি না

বয়েস?

চোদ্দো।

চায়ের দোকানের পাশে ময়লা একটা সোয়েটার আর প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে। হাতে পায়ে সারাদিন রাস্তায় খেটে খাওয়া চিহ্ন। সামনেই রেললাইনের কাজ হচ্ছে। অনেক বাইরের লোক এদিকে এখন। হতেই পারে তাদের মধ্যে কেউ।

নাম?

রতন বাঁশফোড়।

ভাঙা কাঁচ মোবাইলে ইনস্টাগ্রামের অ্যাপে সাইন আপ করতে চাইছে।

এটা কি?

পাসওয়ার্ড দিতে হবে।

দিয়ে দাও।

কি দেব?

শাহারুখ খান।

সাইন আপ হচ্ছেই না। ঘুরেই যাচ্ছে নীল চাকা স্ক্রিন জুড়ে। সে উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে। তার শৈশব, তার স্কুল, তার পড়াশোনা, তার জন্মদিন, তার কিছু নিয়েই সে উদ্বিগ্ন নয়। তার একটা পরিচয় চাই ইনস্টাগ্রামে। যেখানে সবাই আছে। কোহোলি থেকে ধাওয়ান সবাই আছে। তারা কি খাচ্ছে, পরছে, ঘুরছে, সব জানা যাচ্ছে। তারা কখন কাকে আদর করছে, বকছে, ঝগড়া করছে তাও জানা যায়। আরো জানা যায় তারা কখন অসুস্থ, কখন ট্রোল্ড ইত্যাদি। তবে জানা যায় সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল তাদের জগতে নিজের আঙুলের ছোঁয়া দিয়ে আসা যায়। বলা যায় আমি তোমাকে দেখছি, দেখো এই যে আমার ছোঁয়া লাল টকটকে লাভ সাইনটা তোমার জন্য বানালাম।

সামনে পিচ গলানোর মেশিনের ঘড়ঘড় আওয়াজ। মাথায় কাপড় বেঁধে, শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে ঝাঁট দিয়ে যাচ্ছে অনেক মহিলা। কেউ কেউ জল ন্যাকড়ায় করে রোলারের সুবৃহৎ চাকা মুছিয়ে দিচ্ছে। যেন জ্বরে পুড়ে যাওয়া ছেলের কপালে দিচ্ছে জলপট্টি। জ্বর নামাচ্ছে।

সে এদেরই কারোর ছেলে হবে। কোনো দূর গ্রাম থেকে এসেছে। এখানে তো কাউকে চেনে না আশেপাশে। চেনার কথাও নয়। কিন্তু শাহরুখ, ধাওয়ান, কোহোলি ইত্যাদি আরো অনেককে তো সে চেনে। সে ইনস্টাগ্রামে থাকলে তারাও নিশ্চয়ই একদিন তাকে চিনে যাবে। জেনে যাবে সেও তাদেরই লোক।

ফিরছি। রাস্তা অর্ধেক হেঁটে ফেললাম। আমার বন্ধু বলল, সব কেমন বদলে যাচ্ছে না? আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল ছেলেটাকে দেখে।

আমি বললাম, এই যে তুই আধঘন্টা হাঁটার পরও ছেলেটাকে মাথায় নিয়ে ঘুরছিস এটাই বড় কথা রে। এইটা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা যেন ভুলিয়ে দিচ্ছি। জীবনটা আঙুলের ছোঁয়ায় ছ ইঞ্চি, কি পাঁচ ইঞ্চি স্ক্রিণে এমন মানিয়ে গেছে যে বাইরে তাকানোর অবকাশই পাচ্ছি না।

ছেলেটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে ইনস্টাগ্রামে তার পরিচয় বানিয়ে নিয়েছে। তার মা রেললাইন বানানোর রাস্তা ঝাঁট দিতে দিতে, গামছা বাঁধা মুখে অতি কষ্টে শ্বাস নিতে নিতে জানতেই পারছে না, তার ছেলের সঙ্গে তার দূরত্ব কয়েক আলোকবর্ষ বেড়ে যাচ্ছে। ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে সব।