(আজ ধর্মান্ধতার বর্বরতা যখন আবার তার কালো ফণা তোলার উপক্রম করছে, তখন একটু ভয় ভয় করছে বৈকি। তবে কি আমরা...)
ধর্মের দুটো দিক আছে। এক অধ্যাত্মিকতা, দুই সমাজের রজ্জু হিসাবে।
ধর্ম যেখানে ব্যক্তিগত সেখানে সে হৃদয়ের কোমল বৃত্তিগুলোকে অনুসরণ করার, অনুশীলন করার অনুপ্রেরণা যোগায়। এটা সব ধর্মেরই মূল কথা। সত্য, করূণা, প্রেম, অনুকম্পা কোনো একটি ধর্মের নিজস্ব সম্পত্তি না। এগুলো সার্বজনীন সদ-গুণাবলী। সব ধর্মের ভিতর থেকেই উন্নত, উদারচেতা, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের উদাহরণ দেওয়া যায়। ইতিহাসে তাঁদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পথপ্রদর্শকের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আজও লক্ষ লক্ষ মানুষ নীরবে, নিশ্চিন্তে তাঁদের নিজস্ব ধর্মবিশ্বাসের সাথে সবার সাথে মিলে মিশে বাস করছেন।
ধর্মের আরেকটা দিক হল বাইরের দিক। প্রচারের দিক। লোকসংখ্যা বাড়ানোর দিক। এখানে তার সাথে একটি রাজনৈতিক দলের কোনো পার্থক্য নেই। মানব সভ্যতার আদিকালে ধর্মই ছিল মানুষকে গোত্রীকরণের একমাত্র রজ্জু। তখন এত -ইজম(ism) তৈরী হয় নি। আজ কত ইজম রাজনীতিতে, সমাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, ইত্যাদি। সেদিন বাঁধবার দড়ি ছিল শুধু ধর্ম, মানে বহিরাঙ্গের ধর্ম। এক একটা ধর্মের আবার তিন চার রকমের উপবিভাগ। এর কোনোটার কারণ মানুষের কল্যাণ না। মানুষের একত্রীকরণ। যাতে করে দল তৈরী করা যায়। আর দল তৈরী করলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা সহজ হয়। এ আদিম প্রবৃত্তি।
বাকি ইজমগুলোর সাথে ধর্মের একটা মূল পার্থক্য আছে। বাকি ইজমগুলো মেনে চলতে বুদ্ধির একটা স্থান আছে। বহিরাঙ্গের ধর্মে বুদ্ধি প্রধান বাধা। তবে বুদ্ধিকে মোহগ্রস্থ করার উপায়? পরকালের লোভ দেখাও। তাই ধর্ম তার পরকালের কল্যাণ করার আছিলায় বিনা বাধায় হৃদয়ে প্রবেশের অধিকার পায়। আমরা ভুলে যাই যে, ধর্ম কল্যাণ করতে পারে তখনই যখন সেটা ভিতরের জিনিস হয়, দলতন্ত্র না। কিন্তু ততক্ষণে সে হৃদয়ের মধ্যে পৌঁছে গেছে। সেই পথে বিষ দাও বিষ চলে যাবে, মধু দাও মধু যাবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী বিষই গেছে বেশি। কারণ সংসারে দল গড়লে, দলের শত্রু তৈরী হয় অনায়াসেই। আর শত্রু নিধনে, মধু না, বিষ লাগে। সুতরাং ঢালো বিষ।
একজন বিজ্ঞানী আর একজন স্কুলের বিজ্ঞান ছাত্রের যা পার্থক্য, একজন অধ্যাত্ম আলোকিত পুরুষ ও তথাকথিত ধার্মিকের সেই পার্থক্য। একজন বিজ্ঞানীকে গিয়ে যদি বলি ইলেকট্রন আসলে পজিটিভ, অমনি তিনি হো হো করে হেসে উঠবেন, নতুবা আমায় বোঝাবার চেষ্টা করবেন। আর আমার অযোগ্যতা দেখলে, বলবেন পরে বুঝবে।
কিন্তু যদি একজন বিজ্ঞানের ছাত্রকে বলো ইলেকট্রন পজিটিভ সে রেগে যাবে। কারণ সে ইলেকট্রন যে নেগেটিভ, এ তার বিশ্বাস। অভিজ্ঞতা না।
ঠিক সেইরকম যেই কোনো দলতন্ত্রের ধর্মে আঘাত দিল, অমনি সে 'হা রে রে' করে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এ উদাহরণ কম বেশি সব ধর্মে আছে। তবে যে ধর্মে reformation যত বেশি হয়েছে, সে ধর্মে এর ঔদ্ধত্য তত কমেছে। কিন্তু যে ধর্ম কোনো reformation কে স্বাগত জানায়নি সে আরো বেশি ঔদ্ধত্য হয়েছে। কারণ সত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার ওই একটিই উপায়।
কিন্তু শেষ কথা হল-
ধেয়ে আসে ঝড়, বেধে যায় রণ
সব শেষে জয়ী হয়, মৃদু সমীরণ।