Skip to main content

পরিত্রাহি কীর্তন চলছে। সুর নেই। প্রবল শব্দ আছে। শীতের রাত। দুটো কুকুর নিজেদের দিকে তাকিয়ে মুখোমুখি বসে। পাশে মোবাইলের ইয়া লম্বা টাওয়ার। টাওয়ারের মাথায় আটকে একটা উজ্জ্বল তারা।

ননী গলা অবধি চড়িয়ে বাড়ি ফিরছিল সাইকেল চালিয়ে। ননী টলে, সাইকেল টলে। কীর্তনের শব্দে হুড়মুড় করে সাইকেল থেকে নেমে পড়ল। ফাঁকা রাস্তা। সাইকেলটা বুকের সঙ্গে লাগিয়ে মাইকের দিকে তাকালো। তীব্র বেগে কান ঝালাপালা করা শব্দ ছুটে আসছে। ননী জিজ্ঞাসা করল, আমায় ডাকছেন? প্রভু এসেছেন? আসব?

সাইকেলটা মাটিতে শুইয়ে তড়বড় করে টাওয়ারে উঠতে শুরু করল ননী। বাড়িতে, প্যাণ্ডেলে ইলেকট্রিকের কাজ করে। এ সবে চড়া এমন কিছু নয়। উঠে গিয়ে দাঁড়ালো একদম শিখরে। নীচ থেকে কুকুর দুটো তাকিয়ে। তারাটা আরো উপরে উঠে গিয়ে ননীকে দেখছে। কীর্তনের আওয়াজটা অনেক কমে গেছে। ননী চারদিক তাকালো। অন্ধকারে আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, প্রভু.... এসেছেন?

কেউ সাড়া দিল না। ননী উপর থেকে ডান হাতের আঙুলগুলো দিয়ে নল পাকিয়ে দূরবীনের মত করে নীচের দিকে তাকালো। কুকুর দুটো হাঁ করে তাকিয়ে। ননী বলল, স্যার, আপনারা নীচে... আর আমি এই উপরে... ছি ছি... আসছি স্যার... সরি সরি।

ননী হুড়মুড় করে নামছে। শেষ কয়েকটা ধাপের আগেই পা হড়কে গেল। ভাগ্যে নীচে জঙ্গল ছিল। ধপাস করে পড়ল। সেই আওয়াজ শুনে কুকুরদুটো লাগালো দৌড়, লেজ নীচু করে।

ননী রাস্তায় এসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। বলল, স্যার, ইগোতে নিয়ে নিলেন তো… ছি ছি… স্যার… স্যার… আমি একজন তুচ্ছ মানুষ… স্যার… ননী হাঁটু মুড়ে বসে… হাউহাউ করে কাঁদছে.. স্যার.. আমার সঙ্গে এরকম করলেন… আমি ননী স্যার… সেই কবে থেকে আপনাদের গোলাম স্যার… মাইনে বাড়ান না… পুজোয় ভিক্ষার মত বোনাস দেন… কিচ্ছু বলি না… মায়া স্যার মায়া.. তাই অন্য কোথাও ছেড়ে যাই না….. বুঝলেন না… স্যার….

এর মধ্যে একজন কীর্তনিয়া রাস্তায় এসেছিল প্রকৃতির ডাকে, ড্রেনের ধারে। ড্রেনে উষ্ণ প্রস্রবণ সৃষ্টি হয়েছে, ধোঁয়া উড়ছে সেই প্রস্রবণ থেকে… ঠোঁটে বিড়ি থেকেও উড়ছে ধোঁয়া। তামাটে গন্ধ। হঠাৎ কানে এলো কান্নার আওয়াজ। কে কাঁদে!

ফুটপাতে হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদছে জোড় হাতে ও কে? মাইকে তারস্বরে চলছে নামগান। ও যে ভক্তশিরোমণি! মুখ থেকে বিড়ি পড়ে গেল। নিভে গেল। আরেক হাত অবশ। একি দেখছেন! সম্বিৎ ফিরতে সময় লাগল। যেখানের জিনিস সেখানে আবার রেখে, নিজেকে সামলে নিয়ে ননীর সামনে এসে দাঁড়াল কীর্তনিয়া। ননীর হাত দুটো ধরে বলল, ভিতরে আসুন… আপনি ছাড়া কীর্তন অসম্পূর্ণ! আসুন আসুন।

শীতের কুয়াশায় দু’জন মিলিয়ে যাচ্ছে। টলমল পা ননীর। আরেকজনের ভাবে এলোমেলো। কুকুর দুটো আবার এসে বসল আগের জায়গায়। মাইকের দিকে তাকিয়ে।