Skip to main content

কোনো অজ্ঞাত কারণ ছিল। কেউ কিচ্ছু জানল না। কারণ কি ছিল, কাকে জিজ্ঞাসা করবে আজ? সে কই?

    কারণ জিজ্ঞাসা করা হয় না। সময় পাওয়া যায় না। সবটুকু সময় তো আমার একার। তোমায় দেব কেন? সবটুকু সময় নিংড়ে নিংড়ে বার করব আমার জীবনের মহাকাব্য। সময়কে ঘাড় ধরে সকাল সন্ধ্যে, গ্রীষ্মবর্ষাশীতবসন্ত আমার ক্ষেতে জোয়াল টানাই। তুমি কে?

    হঠাৎ সময় দড়ি ছিঁড়ে পালায়। আমায় নেয় না। আমি অভিমান করি, যেন আমায় নেওয়ার কথা ছিল। আমি অভিযোগ জানাই, যেন আমার কাছে অনেক ঋণ সময়ের। আমি অভিশাপ দিই, যেন সময়ের মৃত্যু আমার ইচ্ছা নির্ভর। 

    কাউকে জিজ্ঞাসা করা হল না সে কেমন আছে? সে কিভাবে বেঁচে আছে? তার ঘরদোর সামলে সময় তাকে কিছু হাত খরচা দেয় কিনা? নাকি সময় তার প্রাপ্যটুকুও কেড়ে নিয়ে, তাকে নিংড়ে ফিরে যায়? আমি তো জানি এখন, সময় অত নিরীহ নয়। আমি সময়ের জোয়ালে আটকে। আমায় নিয়ে খেলছে সময়। আমার ভিতরে সময়ের ঘুণ। কুরেকুরে খেয়ে যাচ্ছে। কাউকে জিজ্ঞাসা করা হল না শুধু, সে কেমন আছে? কিভাবে রেখেছে সময় তাকে?

    জ্ঞানী বলবে, বৈরাগ্য নেই তোমার? তবে সময় তোমায় জ্বালাবে না। তুমি জ্যৈষ্ঠের রোদে মাঠে শুয়ে পৌষের আরাম পেতে পারো তবে। কিম্বা গলা জলে ডুবতে ডুবতে বলতে পারো, এ জীবন নশ্বর। পদ্মপাতায় জলের মত নির্মল, ক্ষণিকের মায়াময়। কত রঙিন ছায়া তার ওই কেঁপে কেঁপে ওঠা তরল অবয়বে ফুটে ওঠে! তুমিও তাই, শুধু গড়িয়ে যাওয়ার দেরি। 

    জ্ঞানী শুধু বলে। বিজ্ঞানী যে, না, দাঁড়াও, বিজ্ঞানী মানে কি বুঝলে, সায়েনটিস্ট? ওহো, না না, সে নয়, বিজ্ঞানী মানে সে যে জ্ঞানের কথা বলে না, জ্ঞানের কথা ভাবে না, যে বুক পেতে সবটা অনুভব করে, সরে দাঁড়ায় না। বলে, সরে যাব কেন গো? সব অনুভবের রঙে না রাঙলে রঙ পাকা হবে কি করে? জ্ঞানী জ্ঞানের পাত্র নিয়ে ভয়ে মরে। পাছে ফুটো হয়, পাছে জ্ঞানে পোকা লাগে, পাছে জ্ঞানের কল্কে যায় শুকিয়ে। 

    বিজ্ঞানী পাত্র উপুড় করে বাঁচে। যা পায়, হারিয়ে ফেলে। যা জমে, বিলিয়ে দেয়। যদি বলো, কি জেনেছ? সে হেসে বলে, কিচ্ছু না। ভিতরে বসে যে সব জানে, তাকে জানা যায় না, চোখ দিয়ে কি দেখব চোখ? হো হো হো। 

    তবে? সে বিজ্ঞানী বলে, মজেছি?

    বলি, কোথায় মজেছ গা? এ পোড়া জগতে মজার মত পেলে কি?

    সে তখন ফিক করে হেসে বলে, কেন, এই যে তোমায় পেলুম! 

    হা পোড়া কপাল! আমায় পেয়ে কি করবে?

    সে বলে, করার তো কিছু নেই, ডোবার, মানুষের মধ্যে মানুষ হয়ে ডুব না দিলে যে সব ফাঁকি! জ্ঞান, অজ্ঞান সব ফাঁকি। ডুব দিলেই সব খাঁটি। 

    সময় যায় হারিয়ে। পশ্চিম আকাশে সূয্যি যায় পাটে। আবার পুব আকাশে ফুটে ওঠে জগতের হাটে। বিজ্ঞানী বলে, গান জানো? জ্ঞান ছাড়ো, গান ধরো, জীবন কি বোঝার জিনিস গা? গাওয়ার জিনিস। শেষমেশ শমে এসে না পড়লে মুখ দেখাবে কি করে? শুধুই কি তাল কাটবে? ধরো ধরো, সুর ধরো….