১৯৪৭ সালের, পনেরোই অগাস্ট, দেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। ঠিক তারপরের গুরুত্বপূর্ণ দিন হল আম্বানির পরিবারের বিয়ে। হয় তো বা এই দিনটাকে 'আন্তর্জাতিক বিবাহ দিবস' হিসাবে ঘোষণা করা হবে। সেখানে কে নেই! বুদ্ধিজীবী বামাদর্শী তার্কিক নাস্তিক জাভেদ আখতার থেকে শংকরাচার্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। শাশ্বত রাইমা থেকে অমিতাভ দীপিকা। কে নেই! আর ওদেশের বিখ্যাতেরা তো আছেনই।
এমন সাম্যের মঞ্চ বিশ্বাস করুন আমার জ্ঞানত মনে পড়ছে না। কী যাদুতে তারা একত্র হলেন, সেটাও বুঝে উঠতে পারছি না। এ বিয়েতে প্রতিটা জিও ব্যবহারকারী ভারতবাসীর যে অবদান আছে সে নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু আমার প্রশ্ন একটাই, কী যাদুমন্ত্রে একত্রিত হলেন সবাই? আমার সেই কবিতাটা মনে পড়ছে….
“হে মোর চিত্ত, বিস্ময়াবিষ্ট, জাগ রে ধীরে
এই মুকেশের মহামানবের প্রাসাদতীরে..
…. এসো হলিউড, এসো বলিউড, এসো সাধুসন্ন্যাসী
এসো নেতাগণ, এসো ব্যবসায়ী, এসো সবে সুখপিয়াসী
….. এসো সাংবাদিকগণ শুচি করি মন
হাত ধরো সবাকার
এসো বুদ্ধিজীবী করো অপনীত
সব বঞ্চিতবোধ ভার…….”
সবার সুখময়, হাস্যময়, লাস্যময় মুখ দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, কী কী….কীসে ঘটল এমন যাদু যা এতদিন এত চিন্তাবিদ, এত মানবপ্রেমিক, এত উদারচেতা মানবগণ ঘটাতে পারেনি, সে কীসের যাদু? যদি বলো ধনসম্পদ। তা সে তো বাপু আরো আরো মানুষের আছে। যদি বলো রাজার দক্ষিণহস্ত। সে একটা কথা বটে। কিন্তু আরো কী? কী কী কী? প্রিন্টমিডিয়া, ইলেকট্রনিকমিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাংওভারে চলে গেছে। কী করে সম্ভব হল? যেদিকে তাকাই সেই এক ছবি। কী উল্লাস। কী স্ফূর্তি। কী গম্ভীর অধ্যাত্মিক গাম্ভীর্য। কী দানধ্যান পুণ্যের সমাগম।
কিন্তু স্বভাবদোষে প্রাণ গদগদ হতে পারছে না। যেখানে বিদ্যা, অর্থ, ক্ষমতা, কূটনীতি, সাধনা, বৈরাগ্য সব গিয়ে একত্রে মেশে, সেকি চাট্টিখানি জায়গা রে বাপ আমার! এ তো ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকল।
কিন্তু ভারতমাতা? তিনি কী কোনোদিন বলবেন, মুকেশের গরবে গরবীনী হাম….ধনী মুকেশেরও ধনে……
ভারতমাতা শব্দটা এখন আর আবেদন জানায় না। কারণ মিডিয়া, বা বিনোদনের জগতে সেটা বড্ড ম্যাড়মেড়ে শব্দ। ওই গরীবগুর্বোদের নিয়ে রোম্যান্টিকতার দিন গেছে এখন। এখন ঐশ্বর্য বিজ্ঞাপনের দিন। ছড়িয়ে দিচ্ছি, এসো…. লুটিয়ে দিচ্ছি এসো…. .শুধু বলে যাও আমাদের পরিবারের গৌরব এ জগতের সর্বোচ্চ আসনে! কারণ আর কোনোভাবে জানাতে পারি না আমরা! আর কোনো চর্চায় আমাদের নাম উচ্চারণ করার জায়গা নেই। জানি আমরা। না বৌদ্ধিক জগতে, না সেবার জগতে, না বাস্তবিক সত্যিই কোনো সাধনে…. মানব উন্নয়নে….
এ ভয়ংকর ধনবর্ষণ আর ধনাবগাহন তবে কীসের ইঙ্গিত? কোন সীমাবদ্ধতার? কোন অভাবকে ঢাকতে এতদিকে পুলটিস দিতে হয়? ভাবো ভাবো মন, ভাবো। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে মাচা বেঁধে সবার উপরে উঠে, সবাইকে ডেকে সে মাচায়, কী প্রমাণ করতে হয়? আমি বড় সেটা? নাকি দেখো চাইলে আমিও নিজেকে বড় প্রমাণ করতে পারি, সেটা?….. কোন সীমাবদ্ধতার হীনমন্যতা মানুষকে এতবড় মাচায় তোলে….. ভাবো মন…. ভাবো… খোঁজো মন…. খোঁজো…..