দুর্গা ভ্যানওয়ালাকে বললেন, এখানে একটু দাঁড়া তো বাবা….
পিছনের ভ্যানে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক ছিল।
মা বললেন, কি কাশ হয়েছে রে! আহা! চোখটা জুড়িয়ে গেল। ততক্ষণে পিছনের ভ্যানটা দাঁড়িয়ে। লক্ষ্মী আর কার্তিক বলল, মা আমরা এগোই? ক্লান্ত লাগছে…. এতটা রাস্তা…
দুর্গা ওদের এগিয়ে নেমে গেলেন কাশবনে। গণেশ আর সরস্বতী এলো পিছনে পিছনে।
ভ্যানওয়ালা বলল, মা সদ্য বৃষ্টি হয়েছে, ভীষণ কাদা। তোমার পায়ে লাগবে।
দুর্গা ফিরে তাকালেন। হাসলেন। বললেন, বসার কিছু আছে বাবা? দে না.. একটু এই কাশবনে সূর্যাস্ত দেখি…
ভ্যানওয়ালা ভ্যানের নীচ থেকে একটা দড়িতে মোড়া প্লাস্টিক বার করল, তারপর দুর্গার কাছে এনে বলল, এই নাও মা…. বোসো… জোঁক দেখে…. সাবধানে
দুর্গা বসলেন। পাশে বসল সরস্বতী আর গণেশ। মা বললেন, তোর বাবাকে বলি আমাদের ওখানে এমন কাশবন আর শিউলি লাগানো যায় না? তো তোর বাবা বলেন যেখানের জিনিস সেখানেই মানায়….
গণেশ অমনি নিজের শুঁড়ে হাত বুলিয়ে দুষ্টু চোখে বলল, সেইইইই…
সরস্বতী গণেশের মাথায় একটা চাঁটি মেরে বলল, আবার ফাজলামি!
দুর্গা উদাস চোখে তাকিয়ে। সূর্যাস্ত হবার আয়োজন চলছে পশ্চিমে।
ভ্যানওয়ালা একটা বাটিতে মুড়ি আর ক'টা বাতাসা এনে বলল, মা খাও… জল আনছি।
দুর্গা এক মুঠো মুড়ি মুখে দিলেন। ইশারা করলেন সরস্বতী আর গণেশকে। গণেশ শুঁড়ে করে একটা বাতাসা তুলে মুখে দিল। চোখ মুদে এলো। সরস্বতী মায়ের মত একমুঠো মুড়ি নিয়ে মুখে দিল।
ভ্যানওয়ালা এসে একটা জলের বোতল রাখল পাশে। বলল, স্বচ্ছ জল মা। অমৃত। খাও।
দুর্গা বলল, তোমার নাম মানব কে রেখেছিল জানো?
ভ্যানওয়ালা বলল, ঠাকুমা।
দুর্গা বললেন, হ্যাঁ। সেবারে আমাকে আনার সময় কি গোলমাল! এই সেতুটা ছিল না তো। নৌকা ছিল। তারপর ভ্যান। নৌকাও চড়লাম আর এলো ঝড়। নৌকা গেল উলটে। গ্রামের লোকের অত টাকা কোথায় যে আবার মূর্তি আনবে। ঘটেই পুজো হল।
মানব বলল, তোমার সব মনে থাকে!
দুর্গা হাসলেন।
সন্ধ্যে হল। তারা উঠল আকাশে একটা একটা করে। দুর্গা বললেন, উঠতে ইচ্ছা করছে না।
ভ্যানওয়ালা বলল, মেয়েটার জ্বর। চলো মা। তোমায় প্যাণ্ডেলে দিয়ে আমি মেয়েটাকে নিয়ে ওষুধ আনতে যাব ডাক্তারের কাছে। দেরি হলে বড্ড খ্যাঁচম্যাচ করে মধু ডাক্তার।
দুর্গা হাসলেন। বললেন, চল।
সবাই ভ্যানে উঠল। একই ভ্যানে। আশ্চর্যভাবে সবাই ধরে গেল।
ভ্যান এগিয়ে চলল। চারদিকে ঝিঁঝিঁ ডাকছে। ভ্যানওয়ালা বলল, মা একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
দুর্গা বললেন, কি বাবা?
ভ্যানওয়ালা বলল, মা, তোমার চলে যেতে খারাপ লাগে না?
দুর্গা বললেন, আমি যাই কোথায়… আমার দেবীত্বটুকু যায়। আমি তো থেকেই যাই। নানাভাবে।
ভ্যানওয়ালা বাড়ি এলো। মেয়েটার কাছে গিয়ে বসল। মা নেই মেয়েটার। মেয়েটাকে বলল, চল মা ডাক্তারের কাছে যাই। মেয়েটা বলল, মধু ডাক্তার তো নিজে এসেই ওষুধ দিয়ে গেছে বাবা…. বলল, এদিকে কল ছিল তাই আমায় দেখতে এসেছিল…
ভ্যানওয়ালা চুপ। বলল, প্যাণ্ডেলে চ মা, ঠাকুর আনলাম।
(ছবি Suman)