Skip to main content

        সংখ্যায় বিশ্বাসীরা, সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে কোথাও একটা ঠেকলেই বিরক্ত হয়। তখন গোনায় মানুষ বাধা হয়ে এসে পড়লেও সরিয়ে দিতে হয়। সংখ্যায় বিশ্বাসীরা পাগলের মত গুনে চলে, ১.. ১০০.. ১০০০০... ১০০০০০০। সামনে কাউকে সহ্য করতে পারে না। নিজের ছায়াকেও নয়। একটা গল্প বলি।


        একটা লোক ছিল। সে ঘরের মধ্যে মানুষের ছায়া পেরেকে পুঁতে রাখত। একটা পেরেকে তেরোশো ছায়া ধরত। ছায়া লাগাতে লাগাতে আর দেওয়ালে জায়গা রইল না। সে গাছে, মাটিতে, নদীতে, ব্রীজে, শ্মশানে, মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়, রান্নাঘরে, কল-কারখানায়, বাচ্চাদের স্কুলে, সাইকেলে, রিকশায়, চামচে, কমোডে, চালে-ডালে, সব্জীতে ছায়া চিপকিয়ে রাখত। হৃৎপিণ্ড খুঁড়েও ছায়া চিপকাতে চাইত। কিন্তু হৃৎপিণ্ডের পিছল গা। খুলে খুলে পড়ে যেত। তখন লোকটা সব্বাইকে সন্দেহের চোখে দেখত। ওর মনে হত ছায়াগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলে। বিদ্রোহ করে। তাই পিছল হৃৎপিণ্ড সবার। সে খসখসে হৃৎপিণ্ড চাইত। অনেকেই তাই ছদ্ম-হৃৎপিণ্ড লাগিয়েই লোকটার কাছে আসত।
        একদিন লোকটা স্বপ্ন দেখল। সব ছায়াগুলো একটা বড় ছায়া হয়ে তাকে জ্যান্ত কবর দিল। তারপর তার জিভের মত একটা ছায়া বার করে নিল তার হাঁ-মুখ থেকে। সেই ছায়াটাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারল। ছায়াটা ছাই হয়ে একটা কুকুরের পাছার পাশের লোম হয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। 
        লোকটা ঘুম ভেঙে তরোয়াল নিয়ে বেরোলো। সব ছায়াগুলোর মধ্যে বড় ছায়াটা খুঁজতে শুরু করে দিল। বড় ছায়ার তো আর ঠিকানা হয় না। এদিকে ছায়া ফুরোলে যে অন্ধকার তাকে সে প্রচণ্ড ভয় পায়। লোকটা সন্ত্রস্ত ছায়া গুনতে শুরু করল। ছায়ারা ফিসফিস করে কথা বলছে মনে হল তার। তক্ষুনি সে আদেশ দিল, সবকটাকে বেঁধে ফেল। এখন পেরেকে গাঁথা ছায়াদের, যেখানে একটা পেরেকে তেরোশো ছায়া ধরে, সেখানে কটা দড়ি লাগবে কেউ হিসাব করতে পারল না। হইচই পড়ে গেল। দড়ি যতই বাড়ে ছায়াদের সংখ্যাও যেন ততই বাড়ে। তেরোশো ছায়া ছাব্বিশশো পঁচিশ হয়ে দাঁড়ালো। পেরেক ভেঙে পড়ে প্রায়। দড়িও জোগাড় হয়নি অত।
        লোকটা ঠিক করল, অতএব দেওয়ালে নয়, আকাশে পেরেক গাঁথা হবে। সব ছায়াদের আকাশেই আটকে রাখা হবে। আকাশেই গড়া হবে মসনদ। লোকটা ভেবে নিজেই খুশী হয়ে গেল - ইস, এই কথাটা তার আগে কেন মাথায় এলো না? সারারাত মোচ্ছব চলল। মদ এলো, প্রশাসকেরা এলো, খাকি এলো, গেরুয়া এলো, কালো এলো, সাদা এলো। 
        পরেরদিন হল কি, যেই না আকাশে পেরেক লাগাতে গেল, অমনি পেরেক সব - হুস! সাদা বকের মত মিলিয়ে গেল। ছায়ারা মিলিয়ে গেল। দড়িগুলো খালি ইতিহাসের পাতায় অক্ষর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। সার দেওয়া অক্ষর। তারা বলে চলল নামতার সুরে - কারা কারা আকাশে পেরেক আটকাতে গিয়ে মিলিয়ে গিয়ে দড়ি হয়ে গেছে।