Skip to main content

যা দেখি তা বিশ্বাস করি তার অনেকটা কারণ আমার নিজের দেখার ক্ষমতার ওপর আমার আস্থা আছে বলে। যখন তা দুর্বল হয়, তখন পাশের মানুষের সাহায্যে নিশ্চিত হতে হয় যা দেখলাম তা সত্যি কি না।


     সেই রকম মনের ক্ষেত্রেও। যখন কিছু সত্যি বলে অনুভব করি তখন নিজের অনুভুতি শক্তির ওপর ভরসা থাকলে সংশয় জাগে না। কিন্তু না থাকলে একে ওকে জিজ্ঞাসা করে, সন্দেহ করে মনে ঘোরের পর ঘোর জমতে থাকে। নিজের অনুভুতি শক্তি, বিচার শক্তি যত সুস্থ স্বাভাবিক হয় আশে পাশে সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক ঠেকে। তার দুঃখ যন্ত্রণা কম হয় বলছি না, তা থাকেই কিন্তু তার বিকারটা থাকে না।


     কিছু কিছু মানুষকে দেখা যায় নিজের মধ্যে কোনো কিছু স্থির না করতে পেরে জগতে যা কিছু স্থির, সুস্থ তার ওপর খড়গহস্ত হয় বা ভ্রূকুটি করে ফেরে তার প্রধান একটা কারণ বোধহয় এটা। যাকে ইংরাজিতে cynicism বলে।


     দেখি বিভিন্ন যুগে আবির্ভূত মহাপুরুষদের বাণীর মধ্যে একটা সাধারণ সুর থেকেই যায় - স্থির হও। খুব গোড়ার কথা কিন্তু প্রতিদিন এই অসাধারণ সত্যকথাটি হারিয়ে কি নাকানি চোবানি-ই খেতে হয়। আত্মনিয়ন্ত্রণ হারানোর বড় বিপদ হল দশের নিয়ন্ত্রণের শিকার হওয়া। আমার বিচার-বিবেচনা, আবেগ - কিছুর ওপরেই আমার স্বাতন্ত্র্যতা নেই তখন। এমন মানুষের ভাগ্য খাঁটি সুখ তো দুরের কথা, খাঁটি দুঃখ থেকেও বঞ্চিত থেকে যায় সারা জীবন, যে দুঃখ কে বরণ করে নিলে তার গৌরব।

 

     তাই সাধকেরা চিরকাল বলে এসেছেন, যে মন, বুদ্ধি নিয়ে তোমার জগৎ কারবার আগে সেই মন, বুদ্ধি কে সুস্থ কর বাপু। আগে স্থির হও।কেউ তোমার হয়ে এটা করে দিতে পারে না। তোমাকে নিজেকেই নিজে স্থির করতে হবে। তা তখনই সম্ভব যখন বাইরের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবে,ঘটনা থেকে না, তা তো ঘটে চলবেই। যেমন ঝড় উঠলে মাঝি ঝড়কে শান্ত না করতে চেয়ে তার হাল কে স্থির রাখতে চেষ্টা করে। এই পথ। স্থির হয়ে নিজেকে বোঝ আর সেই বোঝার শক্তি তে অন্যকেও। যেমন চিকিৎসক একটা শরীর ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে সব মানব শরীর কে জানতে পারেন, ঠিক তেমন।