আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের উপর দরদ দেখানো যায়, তার দাবী নিয়ে রোম্যান্টিসিজমের দিন গেছে। তারা রুগীই হোক, কি শ্রমিক, তাদের জন্য একজোট হয়ে কথা বলার মানুষের এখন আকাল। এককালে এক ধরণের রাজনীতির মানুষেরা বলতেন তাদের কথা। এখন ওসব অতীত।
আমাদের বাংলা সিনেমায় অনেক নায়কের উপার্জন কম হত, স্ত্রী নিয়ে বড় পরিবারে নানা গঞ্জনা সহ্য করতে হত, এমন অনেক সিনেমা আমরা দেখেছি। চোখের জল ফেলেছি। তারপর চিনাবাদাম কিনে বাড়ি ফিরেছি। কারণ এ সব সিনেমা যখন হত তখন সিনেমা হলে পপকর্নের যুগ আসেনি।
দরদ দুটো হয়, এক খাঁটি, দুই হিসাবি। খাঁটি দরদ দুর্লভ। কিন্তু হিসাবি দরদ না। হিসাবি দরদ অর্থলাভ আর প্রচারলাভ - এই দুই খাতে হয়। প্রচার বা অর্থ এ দুটোই যখন দুর্লভ, তখন বিষয়টা অনায়াসে আনদেখি করে রাখা যায়।
জগত কীসের বশ? টাকার বশ। ধর্ম থেকে রাজনীতি, খেলা থেকে শিক্ষা ব্যবসায়ীর হাতে। অর্থ লাভের দাবী বোঝে, ন্যায়ের দাবী না। একটা সমাজে যখনই মানবাধিকার কমিশন বসাতে হয় তখনই বোঝা যায় মানবাধিকার বস্তুটা বড় সংকটে। কিন্তু কী সেই মানবাধিকার? হো হো হো। থাক সে কথা।
হেলদি স্কেপটিসিজম ভালো জিনিস। কিন্তু সেটা যখন সিনিসিজমের দিকে যায় তখন মানুষ বড় অসংগত কথা বলে। তখন সবেতেই ভুরু কোঁচকায়।
কিন্তু গরীবের দাবীটা না তো স্কেপটিসিজিমের আওতায়, না তো সিনিসিজমের আওতায়। সেটা এমনই স্থূল, এমনই অকাব্যিক, এমনই রূঢ় আর এমনই বৌদ্ধিক জগতে মিসফিট যে তাকে নিয়ে না তো চলে আলোচনা-তর্ক, না তো চলে রোম্যান্টিক দেখনদারি কিছু।
তবে? আসলে গরীবের দাবীটা অনেকটাই মনুষ্যত্বের প্রাথমিকদাবীগুলোর কাছাকাছি। অর্থ যেখানে, সেখানে যত্ন, মিষ্টিভাষা, তাড়াতাড়ি একটা কম্প্রোমাইজের রাস্তা পেতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু দরদ দিয়ে কী করা যায়? কিস্যু না। কয়েকটা নাটকীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। কিন্তু তাদের দাবীকে সম্মান জানিয়ে, তাদের অজ্ঞতা, তাদের অসংস্কৃতভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছা, দুটো টাকা জমানোর বেয়াড়া লোভকে একটু কনসিডার করে কাছে ডাকা যায়? যায় না।
তাই তারা এই এত আলোর আড়ালে অন্ধকারেই পড়ে থাকে। সে রুগীই হোক, কী শ্রমিক। চামড়ায় পিন ফোটালেও লাগে, আদলা ইঁট লাগলেও লাগে, কিন্তু চিত্ত বড় সিলেক্টিভ। কীসে দরদ জাগে, কাতে দরদ জাগে, কোন হাওয়ায় পাল তোলে আর কোন হাওয়ায় পাল তোলে না, সে কম্পাসের গতিবিধি বোঝা বড় শক্ত। সবার তো আর দল গঠনের বুদ্ধি-অর্থ বল থাকে না, না! তাই তাদের ক্ষীণ কণ্ঠের যন্ত্রণার ডাক এত কোলাহলে পৌঁছায় না উঁচুমহলে। সে অন্ধ তুলাদণ্ডীর কাছে যদিও বা পৌঁছায়, তার দুর্বল আবেদনকে নস্যাৎ করেই দেওয়া যায়। আপাতত তারা যেমন আছে থাকে। পরে যে কজন বেঁচেবর্তে থাকে, তাদের নিয়ে কাজ শুরু করা যাবে। গরীব এক আশ্চর্য রক্তবীজ, ওরা থেকেই যায়..... নিঃশেষ হয় না। ডাকলেই আবার সুড়সুড় করে চলে আসবে দেখবেন। এমন মেরুদন্ডহীন জাত একটা! শালা লোভী, অসংস্কৃতের দল!