Skip to main content

তোমার পাশের বাড়িতে আমি থাকতাম
তুমি চিনতে না আমায়
রোজ যখন তুমি বাইরে বেরোতে
তোমার গায়ের গন্ধ আমার বাড়ির বাগানে আসত
আমি চুলগুলো বিছিয়ে কুড়িয়ে নিয়ে আসতাম
তুমি টের পেতে না

যখন সন্ধ্যেবেলা এক আকাশ তারা
বিকালের গরম হাওয়া, বনফুলের গন্ধ-
সবাই থাকত পড়শীর মত
চাপা গলায় কথা বলত তোমার সিলিং ফ্যান
তুমি জানতে না, আমি শুনতে পাচ্ছি

খুব বর্ষায় তোমার বাড়ির জল
আমাদের বাড়ির ড্রেনের সাথে মিশে যেত
ছোট ছোট বুদবুদের দল নাচতে নাচতে
   আমার চোখের সামনে দিয়ে যেত
তোমার মুখের মত ওদের মুখ
   তোমার চোখের মত ওদের চোখ
আমি লজ্জা পেতাম,
হাতের আড়ালে মুখ লুকিয়ে দেখতাম
তুমি জানতে না। ভাগ্যিস!

এখন তুমি কোথায়?
আমার ছেলেবেলাটার সাথে
   তুমিও নিখোঁজ হলে
কেউ বলে তুমি চাকরী ছেড়েছ
কেউ বলে তুমি মারা গেছ অ্যাক্সিডেন্টে
আবার কেউ বলে তুমি নাকি,
        বিয়ে করে খুব সুখী হয়েছ

আমার বুকের ভিতরটা খামচে ধরে কে?
সারা শরীরে বিষজ্বালা ধরে
মনে হয় সমস্ত পুরুষ জাতটাকে শুষে নিই
যোনির মধ্যে, শেষ করে দিই সব।
কিন্তু আমার তো যোনি নেই!
আমি তো পুরুষ
আমার সর্বাঙ্গে বড় বড় লোম,
   আর সবচাইতে বড় লজ্জা আমার
      - পুরুষাঙ্গ!

হে ঈশ্বর, হে নির্ভুল বিধাতা!
এত বড় ভুল!!
কে দেবে মাশুল!
আর কত, আর কত, আর কত অভিনয় বিধাতা!
এতবড় রসিকতা কেন করলে,
  ওগো নিষ্ঠুর,
কেন দিলে এমন তৃষ্ণা!
যে শরীরের সব তাপ শুষেও মরতে চায় না!!

না। আর না।
তোমার কৃত ভুলের বোঝা, আমি বইব কেন?
উপড়ে ফেলব এ মুখোশ,
মৃত্যুভয়?
শবদেহের কোনো মৃত্যুভয় নেই!!!
আমি বাঁচব, মৃত্যুর স্বাদেই আমি বাঁচব
আমি বাঁচব আমি হয়েই, হই অপূর্ণ,
তবু নারী আমি! আর অভিনয় নয়
ওগো মৃত্যু, ওগো সত্য, ওগো অন্তর্যামী
জাগো জাগো জাগো!


(এবারে অস্কারে মনোনীত চলচ্চিত্র, 'ড্যানিশ গার্ল' দেখলাম। এ মাত্রার অভিনয়, এ মাত্রার সংবেদনশীল চিত্রনাট্য - আমি বাকরুদ্ধ। বিষয়টি ছিল একজন আপাতভাবে পুরুষের লিঙ্গ পরিবর্তন করে নারী হয়ে ওঠার অদম্য ইচ্ছা। এটা ঘটনা। বাস্তবটা অত্যন্ত করুণ, মর্মান্তিক, ইতিহাসের সেই সময়ে দাঁড়িয়ে। এ লেখাটি সেই চরিত্রর হয়েই লেখা। যদি ভাল লাগে পূর্ণ কৃতিত্ব সেই অসামান্য অভিনয়ের, চিত্রনাট্যের আর যদি না লাগে আমার বোঝার ও প্রকাশের অক্ষমতা)

Category