Skip to main content

তুমি তো জলতরঙ্গ নও, জল। সব সময় সুরে বাজবে, এ মাথার দিব্যি কে দিল তোমায়?

মাঝে মাঝে সব সুর পাশ কাটিয়ে এসো। মাঝে মাঝে সব ভিড় পাশ কাটিয়ে এসো। একা কোনো ফাঁকা জায়গায় এসো।

এসেছ? এবার নিজের মুখোমুখি দাঁড়াও। যেন তুমি মাষ্টার, ক্লাসে এসেছ। কিছু পড়াবে বলে না। ফাঁকা ক্লাসে খানিক সময় কাটাবে বলে।

এবার রোল কল করো। নাম ধরে ডাকো। প্রথমে ডাকো, বিরক্তিকে। সে উঠে দাঁড়াবে ব্যাজার মুখে। দাঁড়িয়েই বলবে, উফ, আমার কথা বলতে ভাল্লাগছে না… কি চাও?

শান্ত হও। ভড়কালেই ভড়কিও না। ভড়কানোতেই জগতে এত কোলাহল। তুমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো, "কেটে যাবে, সময় কেটেই যায়, ছেঁড়া তাল জুড়ে যায়, জোড়া তাল ছিঁড়ে যায়। আবার জুড়ে যায়। মোদ্দা কথা সব কেটে যায়, সময় বয়ে যায়"।

সে বসে পড়লে ডাকো তার পাশে বসা অভিযোগকারীকে।

সে তোমার ডাকের অপেক্ষায় উসখুস করছিল এতক্ষণ। নিশ্চয়ই তোমার চোখে পড়েছে। উঠেই সে বলবে, আমায় এত পরে ডাকতে হয়?

তুমি তার কথা শোনো মন দিয়ে। আবার বলছি ভড়কিও না। সে যা বলছে বিশ্বাস কোরো না। তার দশ আঙুল দশ হাজার দিকে। সব দিকে তার অভিযোগ। সব ইন ডিটেলস শুনতে যেও না। মোটামুটি আউটলাইন নিয়ে তাকে বলো, বেশ বেশ, আমি দেখছি। অভিযোগকারীর কথা মন দিয়ে শুনলে দেখবে সে খানিক শান্ত হয়। সে দেখবে ফিসফিস করে বিরক্তির সঙ্গে কথা বলছে, পাত্তা দিও না।

এরপর ডাকো গোঁসাকে।

সে উঠেই ফোঁসফোঁস করে একাক্কার কাণ্ড করবে। সে আসলে নিজেই জানে না তার কি হয়েছে। আসলে বুদ্ধিটা ব্যালেন্স না হারালে একটা মস্তরকম খেপে ওঠা প্রায় অসম্ভব। তাই তাকে তিরস্কার কোরো না প্লিজ। তার দিকে করুণায় তাকাও। সে করুণা দেখলে বড্ড কনফিউজড হয়। কারণ করুণা আবার বুদ্ধি গোটাগুটি ব্যালেন্স না হলে জন্মায় না। দেখো তোমার করুণ আঁখিই তাকে অনেকটা শান্ত করবে। সে বসে পড়বে। আসলে গোঁসা ততটা প্রতিকার চায় না, যতটা শীতলতা চায়।

এরপর ডাকো ঈর্ষাকে।

সে তো চোখটোখ পাকিয়ে উঠবে। তোমার কথা শুনবে। কিন্তু বিশ্বাস করবে না। ওকে ক্লাসরুমে রেখো না। দরজার কাছে নীলডাউন করিয়ে রাখো। যতবার চোখ পাকাবে, নাক ফোলাবে ততবার বলবে যা যা মাঠের ঘাস ছেঁড়। সমান কর। ঈর্ষাকে ঘাসের কাছে রাখবে। মাথাটা নীচু।

এরপর ডাকো ভয়কে।

দেখবে সে নামে আসলে ক্লাসে কেউ নেই। ওটা একটা মিছিমিছি নাম। একটু আনমনা হয়েছ কি ওর নামে এ সে প্রক্সি দিয়ে বলবে, উপস্থিত! আসলে সে নেই তো।

এরপর দেখবে ক্লাসের মধ্যে একটা গুঞ্জন। সবাই কেমন যেন উসখুস করছে। তোমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

ওরা হল ভালোবাসার দল, ওরা বলবে, বাইরে গেলে হয় না… এই ক্লাসরুমে যে দমবন্ধ হয়…. চলুন না মাঠে…. এমন রোদ… এমন দারুণ ওয়েদার…. যাই না মাঠে… খেলি না গিয়ে..

সব ঠিক থাকলে ওদের নিয়ে বেরিয়ে পড়তেই পারো। আর যদি দেখো ওয়েদার খারাপ, আকাশ ভর্তি ঝোড়ো মেঘ, কি গা পোড়ানো রোদ্দুর, তবে তখন ওদের গল্প শুনিও। ইতিহাসের গল্প, নানা দেশের গল্প। ভালোবাসা গল্প শুনতে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে।

আসলে সবই আমি, তুমি। ভালোমন্দ সবটুকুই তুমি আর আমি। মাঝেমধ্যে একটু ঝাড়মোছ করলে হতাশার ঝুল, বিষাদের মাকড়সা জমে না এই আরকি। যদি দেখো ঝুলে মাকড়সায় ভরে গেছে, নিজে আর পারছ না…. হেডমাস্টারমশাইকে ডেকো। সব সাফসুতরা করে দেবেন। হেডমাস্টার কে? সে ডাকলেই বুঝবে। সব কি বলা যায় নাকি? ক্লু? সে দিতে পারি…. গীতবিতানে ঠিকানা আছে…. আরো অনেক জায়গায় আছে… তবে ওটি বেশ সরস…. ডেকেই দেখো না….