Skip to main content

আমায় অন্যমনস্ক করল তোমার ডাক। আমায় ভাবালো তোমার ডাক। আমায় আমার সামনে দাঁড় করালো তোমার ডাক।

    কি ভাবে ডাকলে? কি ছিল তোমার ডাকে? কে এসে আমায় বলল, চলো। আমি ভাবলাম বলি, দাঁড়াও ডাক, আমার অনেক কাজ বাকি!
    বললাম না তো! বলতে পারলাম না তো! ঝরা ফুলের রেণুর মত ঝরে পড়ল আমার সাজ। আমার কাজের সাজ। আমার বাইরের সাজ। আমার চিত্ত হল নগ্ন। এ ডাক কেমন ডাক?
    এত গভীরে বাতাস লাগেনি তো বুকে আগে। এমন বেদনা জাগেনি তো আগে কখনো। এ কেমন আমি? এ কোন ভরসা, এ কোন পরিচয়ের মুখোমুখি তুমি করলে আমায় ডাক?
    এতদিন যত ডাক শুনেছি, সে সবই বাইরের ডাক। সে ডাকে আমি সাড়া দিই এমন যো ছিল কই? সে ডাকে সাড়া দিয়েছে আমার পোশাক, আমার সম্পর্কের কর্তব্য, আমার কাজের দায়িত্ব - আমায় চায়নি তো কেউ। আমি সাড়া দিই মনে করে দরজা অবধি ছুটে গিয়েছি তো, মনে হয়েছে সে ডেকেছে আমায়। ব্যাকুল চোখে তাকিয়েছি তার দিকে, সে কৌতুহলী চোখে আমার হাতের দিকে চেয়েছে। বারবার আমার হাতের থেকে কিছু নিয়ে চলে গেছে, হাত চায়নি তো! আমায় চায়নি তো!
    এমনই হয়েছে। শুধু এমনটাই হয়েছে বারবার। আজ তোমার ডাকে আমার এতদিনের অভ্যেস পড়ল মুখ থুবড়ে। আমি হতবাক হয়ে ভাবছি, সাজব? দেব সাড়া? একি সত্যের মত কিছু অভিনয়, না সত্য নিজেই? সংশয় করব যে - না আছে সে সাহস, না আছে সে সময়।
    এসো তবে তাই হোক। দিই ধরা তোমার ডাকে। ডাকের মত ডাকে। আমার ঘুমন্ত আত্মাকে স্পর্শ করা ডাকে। এসো এসো এসো।
    আমি দরজার বাইরে এলাম। কোথায় তুমি? তবু ডাকটা যে এখনো বাজছে প্রাণের কাছে! এই তো সুনীল আকাশ তার মুখ তুলে চেয়ে, এই তো বাতাসের বান্ধব স্পর্শ, এই তো মাটিতে স্নেহের আঁচল, এই তো আলো দুবাহু বাড়িয়ে আমার দিকে। ওগো, তুমি কই? কই তোমার সৌম্যকান্তি মুখমণ্ডল, কই তোমার সমুদ্র অতল চোখ, কই তোমার সান্ধ্যমায়া হাসি, কই তোমার মরণ আমন্ত্রণী ওষ্ঠ?
    আমি ছুটতে ছুটতে ঘরের থেকে বহু দূর। আত্মীয়রা অনাত্মীয় হয় যতদূর গেলে, তার চাইতেও দূর। তুমি কই?
    হঠাৎ আকাশ উঠল দুলে, সমুদ্রের জল উঠল গর্জে, বাতাস উঠল ঝড়ের বেগে মেতে। আমার চুল উড়ল, পোশাক উড়ল, সাজ গেল সব খুলে। বিদ্যুতের ঝলক লেগে চোখ হল অন্ধ। চারদিকে অন্ধকার। ভীষণ ভয়ের বেগে প্রাণ উঠল কেঁপে।
    কেঁদে বললাম, আর হল না যাওয়া? সে ডাক তবে মিথ্যা ছিল?
    চারদিক নিস্তব্ধ, শান্ত। এমন সময় ভেসে এলো অপূর্ব এক কণ্ঠস্বর! যেন আমারই কণ্ঠের দোসর সে। এক চেনা - অচেনা ফুলের গন্ধে আশপাশ ভরে উঠল। এক প্রবল ঝরণা ধারা পড়ল আছড়ে আমার উপর। চারিদিক প্লাবিত করে সে ছুটল, আমায় নিয়েই ছুটল। আমায় ডেকেই ছুটল। ভাসতে ভাসতে দেখলাম তার মধ্যে অসংখ্য বুদবুদ। তারা তৈরি হচ্ছে, ভাসছে, ফাটছে। একটা বুদবুদে আমারও মুখ!