কি পাখি ফকির?
ফকির কান পেতে বলল, সকাল থেকে ডেকে যাচ্ছে ব্যাটা... নামটা আমি জানি.... এই দেখো... মনে তো পড়ছে না.... তুমি পরে এসো... আমি মনে করে রাখি....
ক’দিন পর আবার ফকিরের সঙ্গে দেখা। ফকির বসে গাছের তলায়। বললাম, ফকির নামটা মনে পড়ল?
ফকির হাঁ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল খানিক। বলল, কি পাখি ভাই? তুমিই বা কে?
আমি অপ্রস্তুত। আমারই ভুল, পাগলের সঙ্গে কেউ কথা বলে!
এরপর অনেক অনেক বছর পেরিয়ে গেল। আমার ঘর হল। ঘর ভাঙল। আমি বদলে বদলে কত কত আমি হলাম। এমন বদল হল যে নিজেকেই চেনা দায়!
একদিন হাটের রাস্তায় যাচ্ছি। চারদিকে হইচই। এক ক্ষ্যাপা এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। বলল, শুনতে পাচ্ছ?
আমি বললাম, কি? তুমিই বা কে?
সে বলল, আমি কেউ নই... তুমিই একদিন আমায় এসে পাখির নাম জিজ্ঞাসা করেছিলে... মনে পড়ে? শুনবে সে পাখির নাম?
আমি বললাম, দাঁড়াও... আমি তো কোনো পাখির ডাকই শুনতে পাচ্ছি না... নাম জেনে কি হবে?
ক্ষ্যাপা হাঁ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। চোখের কোলে জল। বলল, কি বলো গো.. পাখিটাকেই হারিয়েছ? সেদিন যদি ডাকটা চিনে রাখতে... বেঁধে রাখতে হৃদয়ে... আজ তোমার এ দশা হত না... তুমি মরলে নামের ঘোরে... ডাক না জেনে নাম জেনে কি করবে গো?
ফকির মিশে গেল হাটে। আমি সেদিন থেকে হাটের মধ্যে খুঁজে যাচ্ছি পাখির ডাক। ফকির বলে গেল সে নাকি ডেকেই যাচ্ছে.. আমি তার নাম না জানলে কি হবে... সে যে জানে আমার নাম!
আমি কান পেতে আছি, ঘরে বাইরে, রাস্তায় ঘাটে, চেনা অচেনায় তার জন্যে, যার নাম জানি না। ডাক চিনি।