গরম পাত্র কি দিয়ে ধরিস?
সাঁড়াশি... সাঁড়াশি না পেলে কাপড়...
মানে হাত দিস না তো?...
না..
তেমনই মানুষের মাথা গরম থাকলে তাকে ছুঁতে নেই....অল্প একটু
দূরত্ব রেখে দাঁড়াতে হয়...
মানে?
এই যেমন তার ভিতরে যে কথাটা তাকে পোড়াচ্ছে, বা আঘাত করছে, সরাসরি
সেখানে হিট করতে নেই.... তুইও পুড়বি, তার জ্বলুনিও বাড়বে... আশেপাশে এটাওটা কথা দিয়ে শুরু করতে হয়....
যদি আমার নিজেরও মাথা গরম থাকে?
তবে তো আর কথাই নেই... প্রেসার কুকারের একটা সেফটি ভালভ থাকে দেখেছিস তো.... ওটা কাজ করলে ভালো... তবে খানিক চীৎকার চ্যাঁচামেচি করে,
মানে প্রেসার কুকারের সিটির মত আর কি.. থেমে যাবি... আর নইলে ফাটবি..... সব শেষ....
বেলুড় স্টেশন এসে গেল। একজন নেমে গেল। আরেকজন জানলার বাইরে
তাকিয়ে থাকল। পুরোনো সময় ঝুলের মত, যতই ঝাড়ো, আবার জমে যায়। সেদিন অনেক অশান্তি হয়েছিল।
অনেক। অফিস থেকে যত লোকেরাই এসেছিল, সবাই আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছিল, ওনার মত শান্ত মানুষ
এভাবে নিজেকে শেষ কেন করে দেবে... যদি বাড়িতে শান্তি থাকে... অশান্তির কারণ সে যেন একাই....
চাকরিটা না নিলে মেয়েটাকে মানুষ করা যেত না। যদিও চাকরিটা নিতে
লজ্জাই লেগেছিল। সঙ্কোচ হয়েছিল। গরম বালিতে হাঁটলে ফোস্কা তো পড়বেই। পড়েওছিল। অফিসে
অনেক অপমান, তাচ্ছিল্য... যদিও আর বেশিদিন নেই চাকরি.. ট্রেন শ্রীরামপুরে ঢুকছে.... নামতে হবে... মেয়েটাও একই ভুল করবে না তো? স্টেশানে
অনেক ভিড়। অনেক মানুষ। মানে অনেক মাথা। মাথার মধ্যেই সব। ঝর্ণা, দাবানল, উনুন, নদী,
মরুভূমি, জঙ্গল, মেঘ, ধুলোবালি সব.... সব মাথার মধ্যেই। এত এত মাথা... কার মাথার মধ্যে কি চলছে জানা যায়
না... সে
নিজেও জানে না.... এখন
নিজের মাথাটা দেখলে অবাক লাগে... পারা চড়ে না আজকাল... শুধু পুরোনো কথাগুলো ঝুলের মত এ দেওয়াল
সে দেওয়াল জুড়ে জন্মায় খালি। যতই পরিষ্কার করো। আবার হবে। মন যেন মাকড়সা। জাল বুনে
যায়, বুনেই যায়।
দিদি, আসুন।
চেনা অটোওয়ালা। রোজ এই পথেই তো ফেরা, এতগুলো বছর।
আর বলবেন না দিদি... সকাল থেকে মটকা গরম.... দিয়েছি কানের গোড়ায় চালিয়ে.... শালা হাস্পাতালে... কান ফেটে কি রক্ত মাইরি....
মানে মরে যায়নি। মরে যেতেও পারত।
রাগ। এত বড় সংসারে উন্মাদের মত ঘুরে বেড়ানো খিদে না মেটা ভিখারি
একটা, সারাদিন শিকার খুঁজছে... আজ কতজন শিকার হল এই মাটির গোলাটা জুড়ে কে জানে?