সৌরভ ভট্টাচার্য
28 September 2019
উফ, হাতটা কচলে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল পার্থ। হাতের চেটোতে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে একটা। খাওয়াটা পুরো হল না। মাঝরাতে খিদে পেলে? বিস্কুটের কৌটোটা নিতে রান্নাঘরে ঢুকে তাজ্জব হল পার্থ, সিলিণ্ডারটা কই? পাইপটা ঝুলছে ওভেন থেকে। চারদিক তো বন্ধ, তো? এই তো আধঘন্টা আগে মাছের ঝোল গরম করতে ঢুকেছিল। সেটা গরম করে শুধু ওভেনটা অফ করেই খেতে বসে গিয়েছিল, ভেবেছিল দুধটা জাল দিয়ে রাখার পর একেবারে সিলিণ্ডারটা অফ করে দেবে।
সারাবাড়ি খুঁজল। ছাদে দেখল। কোথাও ছ্যাঁচড়ানোর দাগটা পর্যন্ত নেই। হঠাৎ মনে পড়ল সকালে গুন্টা এসেছিল। সে নাকি তুকতাক জানে। সিলিণ্ডার চাইতে এসেছিল যদি ফাঁকা থাকে তার জন্য, পার্থ দেয়নি। যদিও তার কাছে ফাঁকা সিলিণ্ডার ছিল, কিন্তু তবু দিতে ইচ্ছা করেনি। তবে কি?
পার্থ ঘড়ি দেখল, রাত সাড়ে দশটা। এই সময় কারোর বাড়ি কেউ যায়? তবু যেতে হবে। দরজার কাছে এসে ছিটকিনিটা খুলতে যাবে, হঠাৎ গ্যাসের গন্ধ নাকে লাগল। কোত্থেকে আসছে, এ ঘর ও ঘর ঘুরল, না, গন্ধের উৎসটা তো পাওয়া যাচ্ছে না। দরজার ছিটকিনিটায় হাত দিতেই মনে একটা সন্দেহ উঁকি দিল, তবে কি ফাঁকা সিলিণ্ডারটা... দৌড়ে সিঁড়ির তলায় গিয়ে দেখে, যা ভেবেছে তাই, ফাঁকা সিলিণ্ডারটার মুখ থেকে হিসহিস আওয়াজ আর তীব্র গন্ধ বেরোচ্ছে। পার্থ দৌড়ে দরজার কাছে গেল। ছিটকিনিটায় হাত দিয়েই ছিটকে শুয়ে পড়ল পার্থ মেঝেতে, ছিটকিনিটা লাল হয়ে আছে গরম হয়ে। কিন্তু এখনি না বেরোলে এই গন্ধেই মরতে হবে। হঠাৎ রান্নাঘর থেকে একটা খট করে আওয়াজ। দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে মেঝেতে দেশলাই কাঠিগুলো সব ছড়ানো। একটা কাঠি ক্রমশ দেশলাই বাক্সটার দিকে এগোচ্ছে। চকিতে কি ঘটতে চলেছে বুঝে গেল পার্থ। ছাদে উঠল। মেঝেটা প্রচণ্ড গরম। অথচ আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে মুষলধারে।
পার্থ লাফ দিল। মাথাটা শক্ত কিছুতে একটা ঠুকে গেল মনে হল, আন্দাজ সিলিণ্ডারের উপরের গোলটায়। জ্ঞান হারালো পার্থ।
জ্ঞান ফিরল যখন সে খাটে শুয়ে। মাথার কাছে সকালের রোদ এসে পড়েছে জানলা দিয়ে। কিছু মনে করতে পারছে না পার্থ, কি হল, সে কোথায়।
কলিংবেলের আওয়াজ। গুণ্টা দাঁড়িয়ে। "সিলিণ্ডার হবে একটা ফাঁকা, আজ গ্যাসটা ফেরত চলে যাবে নইলে", গুণ্টা বলল।
পার্থর গলাটা শুকিয়ে কাঠ। বলল, আনছি, আছে একটা। সিলিণ্ডারটা সিঁড়ির তলা থেকে আনতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গেল, সিলিণ্ডারটা গরম। ছুঁতে গিয়েই একটা ঠকাস করে আওয়াজ হল। সিঁড়ির তলা থেকেই দেখল দেশলাই বাক্সটা পড়ে গিয়ে সব কাঠি রান্নাঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে গেল। পার্থ সিলিণ্ডারটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েই দেখল গুণ্টা তার পিছনে দাঁড়িয়ে, তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বলল, কাঠিগুলো অপয়া, ফেলে দেবেন।