চুমকি রাস্তার মোড়েই সজলকে দেখতে পেল। তাস খেলছিল ক্লাবের মোড়ে বসে। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা হবে। ক্লাবের দেওয়ালে ঠেস দেওয়া সাইকেলটা দেখে মাথাটা জ্বলে গেল চুমকির। একে চারটে বাড়ি কাজ করতে যেতে হয়েছে হেঁটে হেঁটে। তায় জ্বর গায়ে দুতিন দিন। চুমকি চীৎকার করে বলল, যদি সাইকেল বেচে মদ গিলেছিস…. তোকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেব… শালা হারামজাদা…..
=====
রাত দেড়টা। দরজা খোলার আওয়াজে ঘুম ভাঙল চুমকির। কয়েক মুহূর্তে ঘরের ভিতর মদের গন্ধ ছেয়ে গেল। কিন্তু শরীর দিচ্ছে না চুমকির, যে উঠে গিয়ে সাইকেলটা দেখে আসে। উঠব না উঠব না করে, তবু উঠল। টলতে টলতে বারান্দায় গিয়ে দেখল, সাইকেলটা আছে। আবার টলতে টলতে এসে নিজেকে বিছানায় ছুঁড়ে দিল। তলিয়ে গেল ঘুমে।
=====
ভোরে উঠে বারান্দার বাইরে রাস্তায় জল ঢালতে এসে চোখে পড়ল সাইকেলটা। এটা তো তার সাইকেল নয়! যাতে মাথা গরম না করে চুমকি তাই কারোর কাছ থেকে ধার করে এনেছে সজল। চুমকির মাথার ভিতর শিলের বাড়ির মত পেটাতে লাগল। হঠাৎ কি মনে হল সিঁড়ির তলা থেকে কেরোসিন জারটা নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকল। হড়হড় করে সবটা ঘুমন্ত সজলের গায়ে ঢেলে দিল। তারপর মশা মারার কয়েলের পাশে রাখা দেশলাইটা নিয়ে, জ্বালিয়ে ফেলে দিল সজলের গায়ে।
দপ করে জ্বলে উঠল সজল। চুমকি বাইরে এসে দরজাটা বাইরে থেকে আটকে সোজা থানার দিকে ছুটল।
======
সজল মারা গেল পরের দিনই হাস্পাতালে। চুমকি শুনল। বলল, সাইকেলটা ফেরত দেওয়া হয়েছে?
সাইকেলের মালিক আর সাইকেল নিতে আসেনি। বন্ধ বাড়ির সামনে রোদে জলে পড়ে থাকতে সাইকেলটায় মরচে ধরে গেল। কেউ বলে রাতে বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ পায়। কেউ বলে প্যাডেল ঘোরানোর শব্দ পায়।
চুমকি জানত এ ঘরে ঢুকলে সাইকেলটা বাঁচবে না। যেমন তার পেটে চারটে বাচ্চা বাঁচেনি। সজল আসলে সব বেচে সংসারটা শেষ করে দিতে চাইছিল। শুধু চুমকিকে বেচতে পারত না বলে তার এত রাগ ছিল নিজের উপর। মদ গিলে গিলে নিজেকে যা করেছিল ও এমনিই মরে যেত, যদি চুমকি ওকে ছেড়ে যেত। অবশ্য সে যেতই বা কোথায়!
চুমকি সজলকে মুক্তি দিল। নিজেও নিতে পারত, কিন্তু আবার ওর সঙ্গে, চিতার আগুন পেরিয়ে? অগ্নিসাক্ষী, তারা কোনোদিন সুখী হয়নি। আবার সেই আগুনে!
চুমকি মাঝে মাঝেই জিজ্ঞাসা করত, সাইকেলটা কেউ নিয়ে গেছে? মাঝে মাঝে মাঝরাতে চীৎকার করে জিজ্ঞাসা করত, সাইকেলটা কেউ নিয়ে গেছে… নিয়ে যেতে বলো… ও বাড়িতে ও বাঁচবে না নইলে….
চুমকি মাঝে মাঝে দেখত সাইকেলটা একটা বাচ্চা হয়ে জেলের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চুমকি চীৎকার করে বলত, পালা পালা….
চুমকি সুস্থ হয়নি আর। মানসিক হাস্পাতালে যেদিন বিকেলে মারা গেল, সেদিন দুপুরেও জিজ্ঞাসা করেছিল, ও খেয়েছে? জানো তোমরা?
কেউ জিজ্ঞাসা করেছিল, কে?
সে বলেছিল, সাইকেলটা….